আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বন্ধুরা আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।আমরা কমবেশি সবাই জানি শয়তান আদম আলাইহি সালাম ও হাওয়া আলাইহি সাল্লাম কে ধোকা দিয়ে আল্লাহতায়ালা যে ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন সেই ফল খেয়ে দিয়েছিলেন আল্লাহতায়ালা সেই কারণে তাদেরকে এই পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন।তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল অতঃপর আল্লাহ তায়ালা একদিন তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন এবং সেই ক্ষমা করার দিন কি ঘটনা ঘটেছিল। আজ সেই ঘটনা আপনাদের সাথে আলোচনা করব তো বন্ধুরা চলুন দেরী না করে শুরু করা যাক। বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যখন হজরত আদম ও হাওলায় আলাইহি সালামকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল তখন সমগ্র পৃথিবীতে ঘোরতর আধার বিরাজমান ছিল. তারা তিন শতাধিক বছর সেই আধারেই অতিবাহিত করেছিলেন. অতঃপর যেদিন হজরত আদম আলাইহি সালামের প্রার্থনা মঞ্জুর হল এবং তার অপরাধ ক্ষমা করা হলো. সঙ্গে সঙ্গে তখন তিনি কৃতজ্ঞতা শিকার করে দুটি সেজদা আদায় করলেন. এই সেজদা দুটি ফজরের দুই রাকাত নামাজে পুরণিত হলো.
এর আগে হজরত আদম আলাইহি সালাম কোনো নামাজ আদায়ের হুকুম ছিল না সুতরাং ইতিপূর্বে তিনি কোনো নামাজ আদায় করেননি কিন্তু ওই দিনের পর হতে তার প্রতি ফজরের আদায় করার জন্য দুই রাকাত নামাজ ফরজ করা হয় এবং তিনি তা যথারীতি আদায় করতে থাকেন তওবা মঞ্জুরের দিন যখন সেজা দুটি আদায় করে মাথা তুললেন, তখন দেখতে পেলেন যে ক্ষণিক বাদেই পূর্ব দিক হতে সূর্য আত্মপ্রকাশ করেছে.
এবং তার আলয়ে সমগ্র পৃথিবী আলোকময় হয়ে উঠল. মহান আল্লাহতালা তখন হজরত জিব্রাইল আলাই সালামকে নির্দেশ দিলেন আদমকে তুমি আম্মাম প্রান্তরে নিয়ে যাও এবং তথাই বসে তার পৃষ্ঠদেশ তোমার একটি ডানা মর্দন করো এবং এতে করে দুনিয়ার বুকে কেয়ামত পর্যন্ত তার যত সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারা সকলেই তাদের সামনে প্রকাশিত হবে তুমি আদমকে তাদের দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দাও.
মহান আল্লাহতালার নির্দেশ মোতাবেক জিব্রায়েল আলী সালাম হজরত আদম আলাই সালামকে আম্মানের বিশাল প্রান্তরে নিয়ে গেলেন. এবং তথাই গিয়ে তিনি আদম আলী সালামের পিঠে ডানা মর্দন করলেন.
এতে মহান আল্লাহতালার অসীম কুদরতে. হজরত দম আলাই সালামের চোখের সামনে তার ভবিষ্যৎ সন্তান-সন্ততিগণ আত্মপ্রকাশ করলো. তাদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে. সমগ্র পৃথিবীর প্রশস্ত জমিনেও তাদের দাঁড়াবার স্থান সংকুলন হচ্ছিল না. এই অবাক দৃশ্য দর্শন করে হজরত পরম বিস্ময়ের সঙ্গে জিব্রাইল আলাই সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন ভাই জিব্রাইল এরা কারা?
জিব্রাইল আলাই সালাম বললেন এরা সকলেই আপনার বংশধর. এদের আবির্ভাব ঘটবে এই পৃথিবীতে. এটি শ্রবণ করে আদমআলাই সালাম পুনরায় জিব্রাইল আলাই সালামকে জিজ্ঞাসা করলেন বংশধরগণ আগমন করলে জমিনে তো তাদের স্থান দিতে সক্ষম হবে না.
তখন এরা কোথায় অবস্থান করবে? হজরত আদম আলাই সালামের এই জিজ্ঞাসার প্রেক্ষিতে, মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে জবাব এলো. আদম তুমি তোমার বংশধরদের দেখে জমিনে, তাদের উপস্থিতির ভাবনায় পড়েছ, ভাবনার কোনও কারণ নেই.
কেননা আমার ব্যাবস্থাপনায় সব কিছুরই বন্দোবস্ত হয়ে যাবে. একই সময়ে তাদের কেউ কেউ দুনিয়াতে আসবে, কেউ থাকবে মায়ের গর্ভে. আবার কেউ থাকবে তাদের পিতার পৃষ্ঠে. আবার কেউ থাকবে কবরে. তাই এদেরকে নিয়ে জমিনের কোনো অসুবিধাই হবে না. মহান আল্লাহতালার বাণী শ্রবণ করে হজরত আদম চিন্তা মুক্ত হলেন কিন্তু তার মনে আবারও এক নতুন চিন্তার উদয় হলো.
তিনি জিজ্ঞেস করলেন হে মহান আল্লাতালা আমার বংশধরগণ সকলে কি এক শ্রেণীর হবে নাকি এদের মধ্য বৈষম্য ও ব্যাবধান থাকবে মহান আল্লাহতালা বললেন না এরা সকলেই এক ধরনের হবে না তাদের মধ্য অবশ্যই ছোট বড়, উঁচু নিচু উত্থান অধম এবং ধোনি গরিব থাকবে কেউ বাদশা হবে কেউ হবে তার পূজা কেউ ধনবান হবে কেউ বা হবে মর্যাদাশালী আবার কেউ হবে মানমর্যাদা হীন.
এই প্রকার বৈষম্য তাদের মধ্য বিরাজ করতে থাকবে এই কথা শ্রবণ করে হজরত আদম আলাই সালাম ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন তাহলে তো আমার বংশধরদের মধ্য বহু ঘাত সংঘাত হবে.
অশান্তি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে. আপনি এই অবস্থার সৃষ্টি করে কি উদ্দেশ্য সাধন করবেন? আমার মনে হয় আপনি যদি আমার বংশধরদের সবাইকে একই ধরনের একই শ্রেণীর বৈষম্যহীন রূপে প্রেরণ করেন. তাহলে তাদের মধ্যেও কোনো প্রকার অশান্তি অজানা কথার সৃষ্টি হতো না. বরং পৃথিবীতে চূড়ান্ত শান্তি বিরাজ করত. তখন মহান আল্লাহতালা বললেন হে আদম.
এ রাখো আমার মানব সৃষ্টির মুলে একটি নিগুরো উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে. আমি তোমার বংশধরদেরকে উদ্দেশ্যহীনভাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করবো না. যাকে ধনসম্মান মর্যাদা সুখ-শান্তি দিয়ে প্রেরণ করবো এবং দেখবো সে আমার নিয়ামত প্রাপ্ত হয়ে আমার তৎপর নির্ধারিত কর্তব্য সমূহ পালন করে কিনা যাকে আমি এই সকল নিয়ামতহীন করবো. নিঃস্ব অবস্থায় পৃথিবীতে প্রেরণ করবো তাকেও দেখবো সে নিজের অবস্থার ওপর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে কিনা?
প্রথম শ্রেণী যদি শুকর আদায় করে এবং কর্তব্য পালন করে. আর সে নিঃস্ব শ্রেণী যদি ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে পরলৌকিক জগতে আমি উভয় শ্রেণীকে উওম রূপে পুরস্কৃত করবো. আর যদি এর বিপরীত করে তাহলে তাদেরকে পরকালে কঠোর শাস্তি প্রদান করবো. এটাই হলো তাদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টির মূল কারণ.
তুমি যে কথা বললে সেভাবে আমি তাদের সকলকে সৃষ্টি করলে আমার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল হবে না. সুতরাং আমাকে এরূপই করতে হবে. মহান আল্লাহতালার জবাব শ্রবণ হজরত আদম আর কোন কথা বলা হতে বিরত থাকলেন.
হজরত মহান আল্লাহতালা বুনিয়াদ সৃষ্টির ভেদ বোঝানোর পর তাদের সমবেত আত্মা সমূহকে নির্দেশ দিলেন. তোমাদের পিতা আদমের দুই পাশে কাতার বেঁধে দাঁড়িয়ে যাও. তারা তাই করল. যারা ডান পাশে দাঁড়ালেন তারা ছিলেন আম্বিয়া,
আউলিয়া, ও মোমিনদের আত্মা শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সঙ্গে রেখে তার পেছনে অন্যান্য নবী রাসুলের আত্মাসম্মালো. এবং তাদের পেছনে মোমিনদের আত্মাসম্মহ কাতার বেঁধে দাঁড়ালো.
আর হজরত আদম এর বাম পাশে দাঁড়ালো. মুশরিক ও কাফেরদের আত্মাসম্মূহূহ এদের মধ্যেও ফেরাউন নমরুদ সাদ্দাদ প্রমুখ. গর্বিতদের পেছনে কাতার বেঁধে, প্রথমে কাফের মুশরেক, এবং তারপর, ফাঁসিক শ্রেণীর গুনাহগাররা দাঁড়িয়ে গেলেও, এইভাবে সবাই দাঁড়ানোর পর তাদের প্রতি লক্ষ্য করে, মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে বলা হল, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?
সকল আত্মা বলে উঠল অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক মহান প্রভু. এই রূপ জবাব দেওয়ার পর মহান আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো যদি তাই হয় াহলে তোমরা সকলেই তোমাদের প্রভুর দরবারে সেজদাহ করো নির্দেশ অনুযায়ী হজরত ডানপাশে দাঁড়ানো আত্মার সমূহের কিছু সংখ্যক সেজদা করলো এবং কিছু সংখ্যক সেজদা করলো না তারা দাঁড়িয়ে াকলো. এইভাবে বামপাশে দাঁড়ানো আত্মা সম্মুখেরও কিছু সংখ্যক সেজদা করল এবং কিছু সংখ্যক কর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকলো,
একটু পরেই প্রত্যেকের প্রতি আবারও সিজদা করার নির্দেশ হলো শেষ হওয়া মাত্রই ডান পাশের আত্মাসম্মূহূহূহের মধ্যেও যারা পূর্বে করেছিল. তারা সহ পূর্বে যারা করেনি, তাদের প্রত্যেকেই সেজদা করলো. কিন্তু অপর দিকে বামপাশে দাঁড়ানো আত্মসমূহের যারা পূর্বে করেছিল তারা কেউই করলো না দাঁড়িয়ে থাকলো হজরত আদম এই দৃশ্য দেখে এর কোন ভেদ বুঝতে পারলেন না.
সুতরাং তিনি মহান আল্লাহতালার প্রশ্ন করলেন. হে আল্লাহ. আপনি আমাকে যে দৃশ্য দর্শন করলেন, এর রহস্য আমি কিছুই বুঝতে পারিনি, অনুগ্রহপূর্বক আমাকে এর রহস্য বুঝিয়ে দিন. মহান আল্লাহ তালা বললেন হে আদম. তোমার ডানে যারা দাঁড়িয়েছে. তারা হল নবী রাসূল এবং মুমিন বান্দা. উহাদের মধ্য যারা প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় সেজদা করেছে. তারা হলেন নবী রাসূল গণ.
আর যারা প্রথমে করেনি. দ্বিতীয় সিজ্দা দিয়েছে তারা হল মুমিন বান্দাগণ এইভাবে হজরত বামপাশে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মধ্যেও যারা প্রথম ও দ্বিতীয় সিজদা করেনি তারা কাফের মুশরিক ও মুনাফিক. এবং যারা প্রথম করলো কিন্তু দ্বিতীয় সিজদা করলো না. তারা প্রথম জীবনে ঈমান রক্ষা করলেও শেষ জীবনে ইমান হারা হবে এবং ডান পাশের যারা প্রথম সেজদা করেনি. কিন্তু দ্বিতীয় সেজদা করে তারা প্রথম জীবনে ইমানহারা থাকলেও শেষ জীবনে ঈমান গ্রহণ করবে।
0 Comments