একজন দয়ালু বাদশাহ কে কেন নিজের আপন মেয়েরা মেরে ফেলেছিল? ----Alhadi

 


আসসালামু আলাইকুম. বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব এমন এক বাদশার কাহিনী নিয়ে যে অনেক দয়ালু এবং মানুষের প্রিয়    ছিলেন। তো বন্ধুরা চলুন শুরু করা যাক, এক দেশে অনেক দয়ালু একজন রাজা রাজত্ব করতেন. তিনি ছিলেন অনেক ধর্মভিরও এবং অনেক দানশীল সবার সাথে ওনার ছিল অনেক ভালো সখ্যতা সবাই ওনাকে অনেক পছন্দ করতো এবং সবাই অনেক অনেক শ্রদ্ধা করতো সেই রাজার ৫ জন কন্যা সন্তান ছিল. যাদের স্বভাব চরিত্র ছিল সম্পূর্ণভাবে বাবার বিপরীত. তাদের অন্তর ছিল অহংকারী পরিপূর্ণ. 

তাদের বাবা যে তার প্রজাদেরকে দান ক্ষয়রাত করতো ইটা তাদের কোনমতে বরদাস্ত হত না. তারা প্রায় তাদের বাবাকে বলতো যে বাবা আপনি কেন সবাইকে দান করেন তারা যেভাবে আছে সেভাবেই তো অনেক ভালো আছে. দ করে এমন গরিব দুঃখীকে আর দান ক্ষয়রাত করবেন না. যদি টাকা খরচ করতেই চান তাহলে আমাদের পেছনে করুন. আমরা আছি আপনার কন্যা. 

তো আমাদের পেছনে খরচ করতে আপনার কোন বাধা নেই  তাদের কথার জবাবে রাজা তাদেরকে বলেন যে আমাকে বলো তো তোমরা আজ পর্যন্ত তোমাদের কোন জরুরী আমি পূরণ করিনি যেটা চাও সেটাই তো আমি তোমাদেরকে দিই তাই না সুতরাং আমি কি করি না করি তার পর তোমরা কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করো না.

 এভাবেই দিন অতিবাহিত হতে থাকে, রাজা তার মেয়েদের আচার আচরণ সম্পর্কে ভালোভাবে ছিলেন. যার কারণে তিনি তাদের নিকট একটি কথা গোপন রাখেন আর সেটা হলো তিনি গোপনে একটি কামরা তৈরী করে রেখেছিলেন. যার মধ্যে তিনি যত রকমের সোনা জহরদ হেরামতী ছাড়াও আরো যত রকমের দামি জিনিস ছিল তা সব কিছু তিনি সেখানে সংগ্রহ হিসেবে রাখলেন. সেখান থেকে রাজা যত ধরনের অর্থ সম্পদ ছিল সেখান থেকেই তিনি তা গোপনে গরিবদের দান করতেন.

 কথায় বলে যে সত্য কখনো গোপন থাকে না. তেমনি ভাবে রাজার এই গোপন কামরার ব্যাপারটিও আর গোপন থাকলো না. একদিন রাজা যখন তার গোপন কামরার উদ্দেশ্যে ছিলেন তখন ছোট শাহজাদী রাজাকে সেই কামরার উদ্দেশ্যে যেতে দেখে ফেলে. এবং সেও রাজার পেছনেই রাজা যখন সেই গোপন কামরার মধ্যে প্রবেশ করেন তখন ছোট শাহজাদী রাজা পেছনে পেছনে সেই কামরায় প্রবেশ করে. 

এবং কামরা ভর্তি এত ধন রত্ন দেখে ছোট সাহজাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে যায়. অতঃপর সে এসে তার অন্যান্য সকল বোনদেরকে বললো যে বাবা আমাদের সাথে অনেক বড় একটি ধোঁকা করেছে. তিনি সমস্ত কিছু  বড় একটি কামরার মধ্যে দুনিয়ার তামাম যত ধনরত্ন ছিল তা সব সেখানে মজুদ করে রেখেছেন. অথচ তার ব্যাপারে আমাদেরকে কিছুই জানালেন না. ছোট বোনের মুখে এমন কথা শুনে সবাই নিজের পিতার উপর রাগান্বিত হয়ে গেল. 



এবং সকলে সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা পিতার রেখে যাওয়া গোপন কামরার মধ্যে যত ধনরত্ন ছিল তা সব দ্বারা লুট করবে এবং সুযোগ বুঝে তাদের পিতাকে হত্যা করে ফেলবে. এখন সরাসরি যদি তারা তাদের পিতাকে হত্যা তা করে ফেলে তাহলে সকলের সন্দেহের তীর তাদের ওপর গিয়ে পড়বে যার কারণে প্রথমে তারা পরিকল্পনা করে তাদের পিতাকে বেহুশ করার সিদ্ধান্ত নিল. 

পরিকল্পনা অনুপাতে একদিন রাতের খাবারের সাথে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হলো যখন রাজা রাতের খাবার গ্রহণ করেন তখন ঔষুধের ক্রিয়ার সাথে সাথে রাজার মধ্যে কাজ করা শুরু করলো যার কারণে রাজার সাথে সাথে বেহুশ হয়ে গেল. অন্যদিকে রাজার অজ্ঞান হওয়া দেখে রাজার কন্যাকে রাজাকে নিয়ে রাজার কামরায় প্রবেশ করলো.

এবং রাজাকে শুয়ে দিয়ে তারা রাজার সমস্ত ঘরে তল্লাশি চালানো শুরু করলো এবং তল্লাশি করার এক পর্যায়ে তারা সেই কামরার চাবি পায়ে গেল. যখন তারা রাজার চাবির সাহায্যে সেই ঘরে প্রবেশ করলো তখন এত হীরা জহরত দেখে তাদের চোখ কপালে উঠে গেল এবং তারা বলতে লাগলো যে তাদের পিতা তাদের সাথে কি ধরনের বেইমানি করেছে যার কারণে এই বেঈমানীর সাজা তাদের বাবাকে অবশ্যই পেতে হবে. 

এরপর তারা এক রাতের মধ্যেই, যত ধন সম্পদ ছিল সেই ঘর থেকে সব সাফ করে ফেলল. এবং রাজার এমন কাণ্ডের কারণে তার কন্যারা রাজাকে সেই ঘরে নিক্ষেপ করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিল. যখন রাজার গায়েব হওয়ার কথা সমস্ত প্রাসাদে ছড়িয়ে পড়ে তখন সবার মধ্যে হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে যায়. সবাই হন্য হয়ে রাজাকে তালাশ করতে থাকে. যেহেতু রাজার এই সিক্রেট সম্পর্কে কেউ না যার কারণে রাজাকে কেউ আর তালাশ করে পেল না. 

যার কারণে উত্তরাধিকার সূত্রে দুই দিন পর তার বড় মেয়েকে রাজার সিংহাসনে বসিয়ে দেওয়া হল. অন্যদিকে দুই তিনদিন পর যখন রাজার জ্ঞান ফিরে, তখন রাজা বুঝতে পারলো যে, তাকে সেই কামরাতে বন্দি করে রাখা হয়েছে. যেখানে রাজার অঢেল ধন সম্পদ রেখেছিল. কিছুক্ষণ পর রাজার বড় মেয়ে দুইটি রাজার সম্মুখে হাজির হয় এবং রাজাকে বলে আব্বাজান আপনি কিভাবে আমাদের সাথে এত বড় প্রতারণা করতে পারলেন আমাদের কথা কি আপনি একটু ভাববেন না?

 বড় ক মুখে এমন কথা শুনে রাজা হতাশ কন্ঠে তাকে বলল আমি আজ পর্যন্ত সমস্ত ধরনের জরুরী করেছি. তার বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত তোমরা আমাকে শুধুমাত্র দুই টুকরো রুট উপর নির্ভর করতে বাধ্য করছো, এমন কর্ম করো না. আল্লাহ সহ্য করবেন না. রাজার মুখে এমন কথা শুনে বড় কন্যা খিল খিল করে হেসে ওঠে এবং বলে যে, আপনি এই কামরা টি তৈরী করে আমাদের জন্য অনেক বড় একটি উপকার করেছেন আস্ত আপনি খাবার হিসাবে দুটি রুটি পাচ্ছেন এটাই হচ্ছে আপনার শেষ খাবার যেহেতু আপনি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন তাই আপনার মৃত্যুটাও হওয়া উচিত যন্ত্রণাদায়ক.

 যার কারণে এরপর থেকে আপনাকে না খেয়ে থাকতে হবে. আর যেহেতু এখন আমি আপনার ভার সামলাচ্ছি সেজন্য আপনাকে এই নিয়ে কোনোপ্রকার টেনশন করতে হবে না. এই কথা বলে রাজার বড় মেয়ে রাজাকে সেখানে বন্দি করে সেখান থেকে চলে আসে. অন্যদিকে ক্ষুধা তৃষ্ণায় যন্ত্র য়ে কাতরাতে কাতরাতে সে রাজা মৃত্যুবরণ করে. 

কোন মানুষ যদি কোন পাপাচারী করে তাহলে সেটার ফলাফল তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হয়. যে কন্যা রাজার রাজ্যের ভরসা ছিল সে ছিল অনেক অনভিজ্ঞ যার কারণে অল্প দিনে রাজ্যের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়. অপরদিকে যখন রাজার মৃত্যুর খবর পাশের দেশের রাজার কানে পৌঁছে, তখন রাজা বলতে লাগলো যে, যতদূর আমি জানি যে রাজার কন্যারা অনেক সহজ সরল. সুতরাং তাদের দিয়ে এ রাজ্য পরিচালনা করা সম্ভব নয়. এজন্য অচিরেই আমিষের রাজ্যে আক্রমণ করব. এবং সে রাজ্যকে নিজের হস্তগত করে নিব অতঃপর কিছুদিনের মধ্যেই পাশের দেশে রাজা আক্রমণ করে বসে এবং আক্রমণের মধ্যেই রাজা সমস্ত কন্যাদের মাথা ধর থেকে আলাদা করে দেয়া হয় কথায় আছে যে যেমন কর্ম করবে, সে তার কর্মের প্রতিফল আগে পরে যখনই হোক অবশ্যই ভোগ করবে.

 রাজা যেহেতু সমস্ত মানুষদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করতো যার এর বিনিময়ে আল্লাহতালা সে রাজাকে জান্নাত প্রদান করবেন এবং কন্যাদের এমন অপকর্মের কারণে তারা তো নিজেদের ইহকাল ও ধ্বংস করেছে. পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে  যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রিয় বন্ধুরা একজন বাবার মাধ্যমে সন্তানের জীবনের শুরু. 

ন্তানের জীবনের বাবার অবদান অনস্বীকার্য. কোন সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারে না. কঠোর শাসন কোমল ভালোবাসা আর ত্যাগে অগ্রগামী যিনি তিনিই তো বাবা. বাবারা যে কোন ধরনের দুঃখ, কষ্ট অকাতরে সহ্য করেন সব সময় চেষ্টা করেন সামান্য কষ্ট যেন সন্তানকে স্পর্শ না করে. সন্তানের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন. তারপরও বাবাদের সঙ্গে আমাদের সমাজ অনেকে খারাপ আচরণ করে থাকেন এটা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ হাদিস বিরুদ্ধ কাজ কোরআন বিরুদ্ধ কাজ এই কাজের প্রতি স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে ইসলামে. 

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহুতালা আনহু বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ পড়া. বললাম তারপর কোনটি তিনি বললেন পিতা মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা. আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। সাহিহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ 

তো বন্ধুরা এই গল্পটি পড়ে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে যেমন মা-বাবার প্রতি কখনো বিমুখ না হওয়া এবং মা বাবার প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তাদের কে সবসময়ই সেবা এবং যত্ন করা তাদের সব কথা মেনে চলা। কারণ মা বাবা কখনো আমাদের খারাপ চায় না তারা আমাদের জন্য যেটি ভালো হবে সেটি আমাদেরকে করতে বলেন বা করার জন্য আদেশ দেন। আমাদের সবার উচিত মা-বাবার কথা মেনে চলা, এখান থেকে আমরা আরো অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি  যেমন কর্ম তেমন ফল এ কথাটির সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে এইখানে আমরা সবসময় চেষ্টা করবো ভালো কাজ করার খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে কাজগুলো করতে বলেছেন নিজে করেছেন এবং করার আদেশ দিয়েছেন তা যেন আমরা করতে পারি হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে তৌফিক দান করুন । খারাপ কাজের শেষ পরিণাম হলো জাহান্নাম আর ভাল কাজের শেষ পরিনাম হলো জান্নাত।  আমরা সবাই চাই জান্নাতে যেতে তাহলে জান্নাতে যেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ভালো কাজ করতে হবে ভালো পথে চলতে হবে। হে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সবসময় ভালো কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন 


Post a Comment

0 Comments