একজন অহংকারী বাদশাহ ফকির হওয়ার বিস্ময়কর ঘটনা। ----Al Hadi

 

অহংকারী বাদশা,শিক্ষনীয় গল্প,শিক্ষামূলক গল্প,ইসলামিক কাহিনী,ইসলামিক গল্প,হাদিসের কাহিনী,Alhadi hb,al hadi hb,nhd501,smdihan,শিক্ষনীয় কাহিনী,al hadi


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,  বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন. বন্ধুরা আজকে যে ঘটনাটি আপনাদেরকে বলবো সেটি হলো  একটি শিক্ষণীয় ঘটনা. একটি দেশে একটি অহংকারী বাদশা ছিল. একটা সময় বাদশা  সারা শহরে ঘোষণা করল কেউ যদি আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেয় যেটা আমি জানি না তাহলে আমি তাকে মালামাল করে দেবো মানে আমি তাকে এমন পুরস্কার দেব যা দিয়ে সে তার বাকি জীবনটা খুব ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবে. এটা ছিল সেই অহংকারী বাদশার ঘোষণা. তারপর তার সেই রাজদরবারে অনেকেই আসলো. রাজ্যের বড় বড় হাকিম আলেম মলবি তার য়ে এসে বিভিন্ন ধরনের ভালো ভালো জ্ঞানের শিক্ষা দিলো. কিন্তু তাদের শিক্ষাই পাচ্ছে. সন্তুষ্ট হলো না. শেষমেষ একটি শহর থেকে একটি অচেনা বৃদ্ধ  ব্যক্তি, সেই রাজদরবারে উপস্থিত হলেন. 

তখন সেই বৃদ্ধ, সে বাদশাকে বললেন, হে বাদশা, তোমাকে তোমার জীবনের গোপন রহস্যের কথা বলতে চায়. কিন্তু আমার একটি শর্ত আছে, বাদশা বলল, কিসের শর্ত? তখন ৃদ্ধ ব্যক্তিটি বললেন, আমার কোন টাকা পয়সা, ধন সম্পত্তি কিছুই চাই না. আমি শুধু একটা পত্র লিখে তোমাকে দেবো. সেই পত্রটি তুমি তোমার পাগড়ির ভেতরে লুকিয়ে রেখে দিও. তোমার খুব শীঘ্রই এমন একটি মুহূর্ত আসবে. সেই সময় তোমার সঙ্গে কিছুই থাকবে না. তুমি যখন অসহায়ত্ত অনুভব করবে এদিক সেদিক ছুটে বেড়াবে তখন তুমি আমার দেওয়া এই পত্রটি খুলে পড়বে. 

তাহলে তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে. আর তখনই তুমি বুঝবে জীবনে গোপন অজানা রহস্য এবং তুমি একটি নতুন জ্ঞান অর্জন করবে. যেটা তুমি কখনোই জানতে না. বাদশা তখন সে শর্তে রাজি হয়ে গেল. এবং সেই বৃদ্ধ  ব্যক্তিটি একটি কাগজে লিখে পত্রটি বাদশাহ কে দিয়ে দিলেন. কিছুদিন যেতে না যেতেই বাদশার কাছে খবর আসলো যে পাশের দেশের একটি রাজা. এই রাজ্যে আক্রমণ করতে আসছে. বাদশা তখন যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিল.

 তারপর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল. বাদশা যুদ্ধ করতে করতে সে তার সৈন্যদের থেকে অজান্তেই পৃথক হয়ে গেল. বাদশা তখন দেখলো তার আশেপাশে আর কেউ নেই. সে তখন প্রাণের ভয়ে একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল. তখন চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল. যে বাদশা যুদ্ধে মারা গেছেন. এখন থেকে পাশের দেশের রাজা এই রাজ্যে রাজত্ব করবে. বাদশা তখন কান্না করতে লাগলো. এবং অনেক অসহায় হয়ে ভাবতে লাগলো যে কিছুদিন আগে আমি এই রাজ্যের বাচ্চা ছিলাম.

 পৃথিবীর নামী দামী জিনিস আমার পদতলে ছিল কিন্তু আজ আমি একটি রুটির জন্য পেরেশান আমাকে কেই বা পানি খাওয়াবে, কেই বা আমাকে খাবার দেবে, এই কথা সে ভাবতে ভাবতে সেই বৃদ্ধ বুজুর্গ ব্যক্তির কথা মনে পড়ে যায়. সে বলেছিলেন, একটি সময় আসবে. তুমি অসহায়তা অনুভব করবে. তখন তুমি আমার দেওয়া পত্রটি খুলে পড়বে. বাদশা তখন সঙ্গে সঙ্গে সেই বুজুর্গ ব্যক্তির দেওয়া পত্রটি খুলে পড়তে লাগলো. 

সেখানে লিখা ছিল এই সময়টি পার হয়ে যাবে. তখন বাদশা সেটি পড়ে আরো চিন্তায় পড়ে গেল. পত্রটিতে লেখা আছে এই সময় পার হয়ে যাবে. অর্থ কি হতে পারে? এই কথা ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়ে গেল যে আমি বাদশা ছিলাম, আমার সম্মান ছিল, আমার গুরুত্ব ছিল, আমার বড় বড় রাজপ্রাসাদ ছিল. আমার হাজার হাজার সৈন্য ছিল কিন্তু সেই সময়টি পার হয়ে গেছে এখন আর কেউ নেই কিন্তু আজ আমি গরিব অসহায় ক্ষুধার্থ না আছে সেবা করার চাকর, না আছে খাবার আজ আমি নিঃস্ব। 

যদি আল্লাহ চাই তাহলে অবশ্যই আজ আমার এই খারাপ সময়টিও পার হয়ে যাবে. তখন বাদশা আল্লাহর নাম নিয়ে গুহা থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে সে তার সৈন্যদের একত্র করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে যখন সৈন্যরা জানতে পারলো, যে বাদশা বেঁচে আছে. মরেনি. তখন সমস্ত সৈন্য একত্র হয়ে গেল. তখন বাদশা মনের মধ্যে সাহস ফিরে পেল. সে তখন বিরাট সৈন্য দল গঠন করে আবার যুদ্ধ শুরু করে শেষমেষ বাদশা সেই যুদ্ধে জয়লাভ করলো আগে সে একটি দেশের বাদশা ছিল. এখন সে দুই দেশের শাহেনশা হয়ে সিংহাসনে বসে পড়ল. 

যখনই সে সিংহাসনে বসে পড়ল তখন সে কান্না করতে করতে আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগলো. তখন বাদশা মনে মনে ভাবতে লাগলো. আমার এই উৎসাহ এবং ইচ্ছা শক্তি সেই বৃদ্ধ বুজুর্গ ব্যক্তির পত্র থেকে পেয়েছিলাম. সে তখন আবারও সে পত্রটি খুলে দেখলো. যে সেখানে একই কথা লেখা আছে এই সময় পার হয়ে যাবে. যখন বাদশা আবারো মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি বাদশা ছিলাম সেই সময়টি পার হয়ে গেছি. আমি ফকির হয়ে গেছিলাম সেই সময়টিও পার হয়ে গেছে. আজ আমি আবারও শাহেনশা হয়ে গেছি.



 অবশ্যই এই সময়টিও একসময় পার হয়ে যাবে. আর শুধু থেকে যাবে. আমার কর্ম এবং আমার ব্যবহার. তখন বাদশার চোখ এমনভাবে খুলে গেল. যে তার সমস্ত সম্পত্তি গরিব মানুষ আর এতিমদের মধ্যে দান করে দিল এবং সে সৎ মানুষ হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য জীবন যাপন করতে লাগলো এই ঘটনার দ্বারা আমরা কি শিখতে পারি কি এমন শিখতে পারি যে আমার জীবনের বেঁচে থাকার অর্থটাই পাল্টে দিতে পারে. 

আমরা সবাই জানি আমাদের জীবন যেমন ক্ষণস্থায়ী ঠিক তেমনই আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত ক্ষণস্থায়ী. আপনি যে পরিস্থিতিতেই থাকুন না কেন এই পরিস্থিতি স্থায়ী থাকবে না. আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন একটি ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন. যে ঘটনাটি আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে. ধরুন আল্লাহ না করুন আপনার এখন অনেক বড় চারিদিক থেকে কষ্ট আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে। 

সেটা হতে পারে আপনার প্রিয়জনকে হারানোর ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে লস হয়ে টাকাপয়সার অভাবে অথবা আপনি আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক কষ্ট আছেন. কিন্তু এই বর্তমান খারাপ সময়টাও পার হয়ে যাবে. আপনার জীবনের দুঃখ কষ্ট বিপদ আপদের মুহূর্তটাও পার হয়ে যাবে. এই কষ্টের সময় আমাদের করণীয় কি? 

এই কষ্টের সময় আমাদের আল্লাহর প্রতি শুক্রিয়া আদায় করা. আল্লাহর কাছে দোয়া করা. আল্লাহর প্রতি ধৈর্য ধারণ করা আর তার সঙ্গে চাই ইচ্ছাশক্তি. চেষ্টা এবং অনুপ্রেরণা তাকলে আপনার এই বর্তমান কষ্টের সময়টাও পার হয়ে যাবে. একটা কথা মনে রাখতে হবে আপনি জীবনে যাই কিছু করেন না কেন শেষ পর্যন্ত আপনি থাকবেন না. আপনার কর্ম থেকে যাবে. 

পরিশেষে আল্লাহর কাছে একটি দোয়া করব হে আল্লাহ আপনি আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দান করুন এবং দুঃখ কষ্টের সময় আপনার উপর বাসা রাখার তৌফিক দান করুন ।  তো বন্ধুরা তাহলে আজ এই পর্যন্ত, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। পোস্টটি ভাল লাগলে সবার কাছে শেয়ার করবেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আল্লাহ হাফেজ। 

Post a Comment

0 Comments