আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বন্ধুরা আমরা সবাই বাঙালি. আর আমাদেরকে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙালি. কারণ আমরা বাঙালিরা কমবেশি সবাই মাছ খেতে পছন্দ করি.আমর যে সমস্ত মাছ খায় সে সমস্ত মাছের মধ্যে সব মাছই যে ভাল তা নয় . এর মধ্যে রয়েছে অনেক বিষাক্ত মাছ,আজ এমনই একটি মাছ নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, যার নাম পটকা মাছ বেলুনের মতো পেট ফোলা বিধায় ইংরেজিতে blue বা বেলুন মাছ হিসাবে পরিচিত একটি এবং স্থানীয় ভাবে পটকা বা টেপা মাছ বলা হয়. দেখতে একেবারে নিরীহ টাইপের হলেও মাছটি কিন্তু অত্যন্ত বিষাক্ত.
সমুদ্রে এই মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না. তবে মাঝে মধ্যে জেলেদের জালে ধরা পড়ে. এই মাছ সম্পর্কে জেলেদের কোন ধারণা না থাকায় তারা নিজেরা এই মাছ খায় এবং বাজারে বিক্রি করে. বিষাক্ত এই মাছ খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে. এমনকি মারাও যায়. আর তখনই পত্রিকায় খবর বের হয়, পটকা মাছ খেয়ে অমুক জায়গায় এতজন অসুস্থ কিংবা মৃত্যু.
সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের খবর ব্যাপকহারে আসছে সে কারণেই জনসচেতনতার কথা চিন্তা করে পটকা মাছের বিস্তারিত নিয়ে হাজির হয়েছি কিভাবে চিনবেন এই পটকা মাছ? এই মাছটি কেন এতো বিষাক্ত? এটি খেলেই মানুষ মারা যায়? ভুল করে এই মাছটি খেয়ে ফেললে এই ক্ষেত্রে কি করবেন?
ডাক্তারের কাছে যাবার আগে কি ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা করবেন? এসবের বিস্তারিত থাকছেই সেই সাথে থাকছে পটকা মাছের মতো আরো কয়েকটি বিষাক্ত মাছের পরিচিতি যেগুলো ভুল করে মুখে নিলেই মৃত্যু একেবারে নিশ্চিত. অথচ এই খাবার গুলো আমাদের হাতের খুব নাগালেই আছে. তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে যাওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাতে.
জানা যায় পটকা মাছ জাপানের ফুগো মাছ নামে পরিচিত. এটি আসলে বিষাক্ত জলস প্রাণী বা এক ধরণের মাছ. এই মাছে রয়েছে ক্ষতিকারক টিটিএক্স বা টেট্রো ডটক্স যা এক ভয়ঙ্কর বিষ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি যে পটকা মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়, তার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে টেট্রাউডন, কাটকিউসিয়া. ইংরেজিতে এই প্রজাতিকে সাধারণত power fish বলা হয় যে নামে ডাকা হোক না কেন তার বিষাক্ততা কিন্তু কোন অংশেই কমে যায় না.
বিষাক্ত পটকার চামড়া যকৃত এবং ডিম্বাশয়ে সব থেকে বেশি বিষ থাকে. পটকার বিষ পটাশিয়াম সাইনায়েডের চেয়েও অনেক বেশি বিষাক্ত. প্রায় এক হাজার দুইশ গুণ বেশি এই বিষের ক্ষমতা. একটি পটকা মাছের বিষয়ে তিরিশ জনের মৃত্যুও হতে পারে. গবেষণায় দেখা গেছে কোন কোন সামুদ্রিক পটকা মাছে প্রতি গ্রামে চার হাজার ami পর্যন্ত বিশ বহন করে. একজন সুস্থ সবল ব্যক্তি এমন বিষাক্ত পটকার তিন গ্রাম খেলেই বিষের ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাবে. অনেকের ধারণা পটকা মাছ রান্না করলে এর বিষ নষ্ট হয়ে যায়. এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা.
অত্যাধিক তাপে বিষের উপাদান এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে. এতে বিষাক্ততার খুব একটা তারতম্যও হয় না. গবেষণায় আরও দেখা গেছে সাধারণত প্রজনন তে বা বর্ষাকালে এই মাছটি বেশি বিষাক্ত হয়ে পরে. তবে অন্য সময়ও মাছটি কম বেশি বিষাক্ত থাকে.
বিষে আক্রান্ত হওয়ার পরের লক্ষণ :
পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না. কারো কারো প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে, আবার কারো কম থাকতে পারে. সেই হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার বিষ মিনিট থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে.
পটকা মাছ খাওয়ার পর পর যে সমস্ত উপসর্গ দেখেই বোঝা যাবে যে তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা
এক : পটকা মাছ খাবার কিছুক্ষণ পর বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে বা বমির ভাব আসতে পারে
দুই : মাথা ঘোরানো মাথা এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাবে.
তিন : তলপেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে.
চার : শরীর অসার হয়ে পড়া, হাত ও পায়ের বেশি দুর্বল হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে. হাঁটাচলার অক্ষমতা এবং স্বাভাবিক চিন্তা প্রকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে.
পাঁচ : কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে পারে.
প্রতিরোধ বা প্রতিকার.
সাধারণত এই মাছ খাওয়া বন্ধ করা সবার জন্য মঙ্গলজনক. তবে যদি কোন কারণে কেউ এই মাছটি খেয়েই ফেলে এবং তার বিষক্রিয়া শুরু হয় তাহলে কি করবেন? জেনে নিন যেভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন.
এক : যেকোনো উপায়ে চেষ্টা করতে হবে তাকে বমি করানোর জন্য. এই ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষ গোবর গুলিয়ে সেই পানি রোগীকে খাইয়ে দিতে থাকেন. যাতে বমি আসে আর ভক্ষণ করা মাছ এবং বিষ বেরিয়ে আসে. দুই : কাঠ কয়লা গুঁড়ো করে সরাসরি অথবা পানির সাথে গুলে খাওয়াতে হবে. কাঠ কয়লাগুড়ু আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিষক্রিয়া নিরাময় একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে স্বীকৃত. তিন : প্রচুর পরিমাণে হতে হবে. তাতে বিষক্রিয়ার ফলাফল খুব দ্রুত কমে আসে. চার : চেষ্টা করতে হবে জ্ঞান রাখার. কারণ জ্ঞান হারালে মস্তিষ্কতার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে. পাঁচ : যতা সম্ভব হাসপাতালের emergency তে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে. এবং অবশ্যই ডাক্তারকে বলতে হবে লাইফ support এ রাখতে.
আজকের পোস্ট এখানে শেষ হচ্ছে না . কারণ আগেই বললেছিলাম এই পটকা মাছের মতো আরো চারটি খাবার নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, ইনশাল্লাহ আলোচনা করবো, তবে এই পার্টে নয় দ্বিতীয় পার্টে. আপনারা সবাই অবশ্যই দ্বিতীয় পার্ট টি পড়বেন, পরিশেষে আজকের আলোচনা শেষে একটা কথাই বলতে চাই আমাদের আলোচ্য পটকা মাছ বিষয়. সাম্প্রতিক সময় গ্রাম গঞ্জে পটকা মাছ খেয়ে অসংখ মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে. আর গ্রামের এই সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা আমাদেরই কর্তব্য. তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে অনেক অনেক শেয়ার করে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিন. আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments