আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভাল আছেন বুর্জ খলিফা নামটি কম বেশী সবাই শুনেছেন , আজ আমরা আলোচনা করব বুর্জ খালিফা নিয়ে। বুর্জ খালিফা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণের ইতিহাস. কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের নাম কি? কিংবা পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ভবনটি কোথায় অবস্থিত? এখানে কি করা হয় বা এটি কি প্রয়োজনে তৈরী করা হয়েছে? এই ধরনের নানান প্রশ্ন আমার আপনার কিংবা যে কারোর মনেই আসতে পারে এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যই আমাদের আজকের এই পোস্ট, আচ্ছা আপনাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং উঁচু ভবন কোনটি?
নিঃসন্দেহে সবাই এক বাক্যে বলে উঠবে দুবাইতে অবস্থিত বুর্জ খলিফা tower এর নাম. আসলেই তাই. উচ্চতায় বিশ্বের সমস্ত স্থাপনাকে ছাড়িয়ে গেছে বুর্জ খালিফা. বুর্জ কলিফার নাম সবার জানা থাকলেও আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জানেন না এই স্থাপনা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান রকম চমকপ্রদ ঘটনা. আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব সেই সব বিষয়ে. সে চমৎকার তথ্যগুলো জানতে চাইলে অবশ্যই সম্পূর্ন পোস্ট পড়ুন
📌📌 আরো পড়ুন :: সমুদ্রের নিচে পাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। যার পরিমাণ শুনলে আপনি অবাক হবেন । ----- Al Hadihb
বুর্জকলিফা আরবি শব্দ. এর বাংলা অর্থ খলি টাওয়ার. দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাসেদ আল মাখতুম এই ভবনটির উদ্বোধন করেন. তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সম্মানে ভবটির নামকরণ করেন বুর্জ খলিফা দুই হাজার দশ চৌঠা জানুয়ারি আরব আমেরতে দুবাই শহরে অবস্থিত এই ভবনটি উদ্বোধন করা হয়.
নির্মাণাধীন সময়ে এই ভবনটিকে সবাই বুজ দুবাই নামে চিনলেও উদ্বোধনের সময়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বুর্জ খলিফা. এই ভবনটির আরেকটি নাম হচ্ছে Dubai tower. বিশ্বের সর্বোচ্চ এই ভবনটি তৈরি করতে যে পরিমান glass এবং steel ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো একসাথে রাখতে সতেরোটি স্টেডিয়ামের মতো জায়গার প্রয়োজন হবে.
ভবনটি তৈরি করতে যে পরিমান ইট বালি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে বারোশো তিরাশি মাইল লম্বা দেওয়াল তৈরী করা যাবে. আশ্চর্যের বিষয় এখানেই শেষ নয়. রকেটের মতো দেখতে দুশো ছয় তলা বিশিষ্ট বুর্জ খলিফার মোট উচ্চতা দুই হাজার সাতশো সতেরো ফুট. ছয় লাখ বর্গফুট বিশিষ্ট এই ভবনে একসঙ্গে বারো হাজারেরও বেশি লোক সমাবেত হতে পারে.
📌📌 আরো পড়ুন :: পরীক্ষায় পাশ করার সর্বনিম্ন মার্ক 33 কেন? ঘড়ির কাঁটা সব সময় ডান দিকে ঘুরে কেন? ----Alhadi
এই ভবনে চুয়ান্নটি elevator বা লিফট রয়েছে. এগুলোর গতি ঘন্টায় চল্লিশ মাইল, সম্পূর্ণ ভবনটি তৈরি করতে মোট ব্যয় হয়েছে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার. বাংলাদেশি টাকাতে তার পরিমাণ এগারো হাজার ছয়শত সত্তর কোটি টাকা. বুর্জ কুলিফার বাইরের প্রাঙ্গনে দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা রয়েছে. এই ফোয়ারাটি তৈরি করতে বাংলাদেশী টাকায় খরচ হয়েছে এক হাজার ছয়শো একানব্বই কোটি আটতিরিশ লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার টাকা.
বুর্জ খলিফা ভবনটি তৈরি করতে প্রায় বারো হাজার শ্রমিক কাজ করেছে. বিলাসবহুল এই ভবনের এক একটি কামরা কেনার জন্য প্রতি বর্গমিটার অনুসারে ক্রেতাদেরকে গুনতে হয়েছে সাঁইত্রিশ হাজার পাঁচশো মার্কিন ডলার. এত উচ্চমূল্য থাকা সত্ত্বেও বছরের মধ্যেই নয়শো কামরার প্রায় সবকটিই বিক্রি হয়ে গেছে. বুর্জ খলিফায় প্রতি বর্গফুট জায়গার মাসিক ভাড়ার, অফিস আদালতের জন্য চার হাজার ডলার. বা দুই লাখ আশি হাজার টাকা.
📌📌 আরো পড়ুন :: পৃথিবীর আকৃতি কেমন ? পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে কোরআন ও বিজ্ঞান কি বলে ?
বুর্জ খলিফাই আমেরিকানদের বসবাসের অগ্রাধিকার লক্ষণীয়. তাদের জন্য এই ভবনের নয় থেকে ষোল তলা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে. এছাড়া ভবনের উনিশ থেকে সাইতিরিশ তলা এবং সাতাত্তর থেকে একশো আট তলায় থাকার ব্যবস্থা আছে. প্রায় নয়শোটি apartment রয়েছে এই ভবনে. একশো আটান্ন তলায় রয়েছে একটি মসজিদ, তেতাল্লিশতম এবং ছিয়াত্তরতম তলায় রয়েছে দুটি swimming pool. আরো আছে একশো ষাট কক্ষবিশিষ্ট একটি হোটেল. এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট অফিস রয়েছে বুর্জ কলিফার বিভিন্ন ফ্লোরে.
বুর্জ কলিফার একশো-ঊনষাট তলা পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়া সম্ভব হলেও এর উপরে যেতে হলে আপনাকে অক্সিজেন সাথে নিয়ে যেতে হবে. অনেক উঁচুতে অবস্থানের কারণে সেখানে অক্সিজেন হতে পারে না, ভবনের একশো ষাট থেকে দুশো ছয় তলা পর্যন্ত কেউই বাস করে না. এই ফ্লোরগুলো ব্যবহার করা হয় কারিগরি কাজের জন্য. মজার ব্যাপার হচ্ছে বুর্জ খলিফা থেকে সূর্য সবার আগে দেখা যায়.
📌📌 আরো পড়ুন :: মধুতে রয়েছে হাজার রোগের ঔষধ । মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা । ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম ।
বুর্জ খলিফায় বসবাসরত বাসীরা দিনের শুরুতে সমতলের অধিবাসীর চেয়ে আগে সূর্য দেখেন. এবং সমতল অধিবাসীদের চেয়ে তারা বেশি সময় সূর্য দেখতে পান. আর এই জন্যই তাদের দিনের পর দিন অনেক বেশি. আরো একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো বুর্জ খলিফার টাওয়ার টি আত্মহত্যার জন্য রেকর্ড গড়েছে. ভবনটি চালু হওয়ার আঠেরো মাস পর জনৈক ব্যক্তি এই অট্টালিকার একশো ছেচল্লিশ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন. লাফিয়ে পড়ার পর সেই লোকটি আটত্রিশ তলায় এসে পড়ে নিহত হন.
এটি হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করার record, এর পরেও অনেকেই এই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে. ফলে অনেকে ভবনটিকে অভিশাপ বলে মনে করেন. ভবনের বাইরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল পার্ক, ভবনের চারপাশে রয়েছে সাত দশম চার একরের অপরূপ সুন্দর উদ্যান, আর তিরিশ একর আয়তনের কৃত্তিম হ্রদ, বুর্জ খালিফার বাসিন্দাদের জন্য প্রতিদিন চুরানব্বই হাজার ছয়শো লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে. যা একশো কিলোমিটার পরিমান অভ্যন্তরীন পাইপলাইনের সাহায্যে সরবরাহ করা হয়.
শীততাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে চৌত্রিশ কিলোমিটার এবং জরুরি অগ্নি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে আরো দুশো তেরো কিলোমিটার পরিমাণ বিশেষ পাইপ লাইনের ব্যবস্থা. বিশাল এই ইমারতটি একসঙ্গে পঁচিশ হাজার লোকের ভার সইতে পারবে. আপনার কখনো দুবাইতে যাওয়ার সুযোগ হয় তাহলে অবশ্যই বুর্জ খলিফা থেকে ঘুরে আসার চেষ্টা করবেন. তবে আপনি কিন্তু চাইলেই এই ভবনে যখন খুশি ঘুরে যেতে পারবেন না. স্বশরীরে ভবনের ভিতর যেতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে পকেটের টাকা.
📌📌 আরো পড়ুন :: সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে কি হবে ? সেহরিতে কিছু না খেলে রোজা হবে? কোনো কারণে সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে সে রোজা হবে কি না? ------ Alhadi HB
একশো ষাট তালা ভবনের মধ্যে প্রায় একশো তলায় যেতে হলে টিকিটের দাম হবে দুশো দেরহাম অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা আর একশো ষাট তলায় যেতে হলে অনুমতি নিয়ে আরও অনেক বেশি দেড়হাম গুনতে হবে. তাই ভবনে প্রবেশের আগে পকেটে পয়সা আছে কিনা সেটাও দেখতে ভুলবেন না যেন. এগুলোই হলো বুর্জ খলিফার অজানা বা চমৎকার তথ্য, বন্ধুরা আমাদের বলা তথ্য গুলো ছাড়া আপনাদের আরো তথ্য জানা থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন. আরেক টি কথা উপরের আলোচনার মধ্যে কোনো ধরনের বানান ভুল তাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন.
তাহলে বন্ধুরা আজ এই পর্যন্ত, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আর পোস্ট টি ভালো লাগলে share করবেন. আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ আল্লাহ হাফেজ ।
0 Comments