ছবিটি কাল্পনিক |
আসসালাম ওয়ালাইকুম. বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন.আজ আমি আপনাদের এমন এক বাদশাহ এর কথা বলব যে আল্লাহর সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে নিজে ধ্বংস হয়েছে এবং নিজের সমস্ত কিছু কে ধ্বংস করেছে। বাদশা সাদ্দাদের তৈরি করা দুনিয়ার বেহেস্ত এবং কিভাবে আল্লাহতালা তা ধ্বংস করেছিল তা জানলে অবাক হয়ে যাবেন আপনিও. আসুন জেনে নেওয়া যাক. ক্ষমতাবান বাদশা সাদ্দাদ হযরত হুদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করে বরং হজরত হুদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর মুখে পরকালে বেহেস্তের বর্ণনা শুনে সাদ্দাদ বললো তোমার খোদার বেহেস্ত আমার প্রয়োজন নেই.
বেহেস্তের যে নিয়ামত ও সুখ শান্তির বিবরণ তুমি দিলে ওমন বেহেস্ত আমি নিজে এই পৃথিবীতে বানিয়ে নিবো. তুমি দেখে নিও. তারপর সাদ্দাদ দুনিয়াতে বেহেস্ত নির্মাণ করার জন্য প্রস্তুতি নিলো. অবশেষে ইয়ামানের একটি শস্য শ্যামল অঞ্চলে প্রায় একশো চল্লিশ বর্গমাইল এলাকার একটি জায়গা নির্বাচন করা হলো. বেহেস্ত নির্মাণের জন্য য়ে তিন হাজার সুদৈর্ঘ্য কারিগরকে নিয়োগ করা হলো. নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেলে তার অধিস্ত প্রজাদের জানিয়ে দিল যে,কারো কাছে কোন সোনা রুপা থাকলে সে যেন তা গোপন না করে.
অবিলম্বে তা রাজদরবারে পাঠিয়ে দেয়. এই ব্যাপারে তল্লাশি চালানো হলো সারাটি রাজ্যে. কারো কাছে এক কণ পরিমাণ সোনা রুপা পেলেও তা কেড়ে নিতে লাগলো. এক বিধবার শিশু মেয়ের কাছে চার আনা পরিমান উপর গহনা পেয়েও তাও কেড়ে নিল. মেয়েটি কেঁদে গড়াগড়ি দিতে লাগলো. তা দেখে বিধবা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানালো যে, হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন. এই অত্যাচারী বাদশাকে তুমি তার বেহেস্ত উপভোগ করার সুযোগ দিও না. দুখিনী বৃদ্ধ মায়ের এই দোয়া কবুল হয়ে গিয়েছিল.
ওদিকে সাদ্দাদের বেহেস্তর নির্মাণের কাজ ধুমধামের সাথে চলতে লাগলো. বিশাল ভূখণ্ডের চল্লিশ গজ জমি খনন করে মাটি ফেলে মর্মর পাথর দিয়ে বেসদের ভিত্তি নির্মাণ করা হলো. তার উপরে সোনা ও রুপোর ইট দিয়ে নির্মিত হলো প্রাচীন প্রাচীর উপর পাথরের ভীম. ও বর্গার ওপর লাল বর্ণের মূল্যমান আলমাস পাথর ঢালাই করে. প্রাসাদের ছাদ তৈরি করা হলো. মূল প্রাসাদ এর ভেতরে সোনা ও রুপোর কারুকার্য, খোচিত ই দিয়ে বহু সংখ্যক ছোট ছোট দালান তৈরী করা হলো.
সেই বেহেশতে মাঝে মাঝে তৈরী করা হয়েছিল সোনা ও রুপোর গাছগাছালি. এবং সোনার খাট ও তীর বাঁধানো পুকুর ও নহর সমূহ আর তার কোনোটি দুধ, কোনো মধু ও কোনটি শরাবধারা ভর্তি করা হয়েছিল. বেহেস্তের ভেতরে দুনিয়াবী মাটির পরিবর্তে শোভা পেয়েছিল সুবাসিত মিসক ও আমবর এবং মূল্যবান পাথর ধারা তার মেঝে নির্মিত হয়েছিল. বেহেস্তের প্রাঙ্গন মনি মুক্ত ধারা ঢালাই করা হয়েছিল. বর্ণিত আছে যে এই বেহেস্ত নির্মাণ করতে প্রতিদিন অন্তত চল্লিশ হাজার গাঁথা বোঝা পরিমাণ সোনা রুপা শেষ হয়ে যেত.
এইভাবে একাধারে তিনশো বছর ধরে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়. এরপর কারিগরগণ সাদ্দাদকে জানালো যে, বেহেস্তর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে. সাদ্দাদ খুশি হয়ে আদেশ দিল যে, এবার রাজ্যের সকল সুন্দর যুবক-যুবতী ও বালক বালিকাকে বেহেস্তে এনে এক করা হোক নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালিত হলো অবশেষে একদিন সাদ্দাদ সপরিবারে বেহেস্ত অভিমুখে রওনা হলো তার অসংখ্য লোক লস্কর বেহেস্তের সামনের প্রান্তরে তাকে অভিবাদন জানালো সাদ্অদাদ ভিবাদন গ্রহণ করে কাছে গিয়ে উপনীত হলো.
দেখলো একজন অপরিচিত লোক বেহেস্তের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে. সাদ্দাদ তাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কে? লোকটি বললেন আমি মৃত্যুর ফেরেস্তা আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ্দাদ বলো তুমি এখন এখানে কি উদ্দেশ্যে এসেছো?
আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আমার প্রতি নির্দেশ এসেছে তোমার জান কবজ করার সাদ্দাদ বলল আমাকে একটু সময় দাও আমি আমার তৈরী পরম স্বাদের বেহেস্তে একটু প্রবেশ করি. এবং এক নজর ঘুরে দেখি. হযরত আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমাকে এক মুহূর্তের সময় দানের অনুমতি নেই আমার. সাদ্দাদ বলল তাহলে অন্তত আমাকে ঘোড়া থেকে নামতে দাও.হযরত আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন না তুমি যে আছো.
সে অবস্থায় তোমার জান কবজ করা হবে. সাদ্দাদ ঘোড়া থেকে এক পা নামিয়ে দিল. কিন্তু তা বেহেস্তের চৌকাঠ স্পর্শ করতে পারল না. এই অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটলো. তার বেহেশতের আশা চিরতরে নির্মূল হয়ে গেল. ইতিমধ্যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশে হজরত জিব্রাইল আলাইওয়াসাল্লাম এক প্রচন্ড আওয়াজের মাধ্যমে সাদ্দাদের বেহেস্ত ও লস্কর সব ধ্বংস করে দিলেন. এভাবেই রাজত্ব চিরকাল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, বর্ণিত আছে যে হজরত মোয়াবিয়া রাদিয়াল হও তালা আনহু ওনার রাজত্বকালে আব্দুল্লা বিন কালো এক ব্যক্তি ইয়েমেনের একটি জায়গা একটি মূল্যবান পাথর পেয়ে তাবিয়া রাদ্দিয়াল্লাহু তালা আনহু ওনার নিকট উপস্থাপন করেন সেখানে তখন কাব বিন আহবার উপস্থিত ছিলেন. তিনি উক্ত মূল্যবান রত্ন দেখে বললেন এটি নিশ্চয় সাদ্দাক নির্মিত বেহেশদের ধ্বংসাবশেষ কেননা আমি শুনেছি যে আমার উম্মতের মধ্যে আব্দুল্লা নামক এক ব্যক্তি সাদ্দাক নির্মিত বেহেস্তের স্থানে গিয়ে কিছু নির্দেশন দেখতে পাবে.
বন্ধুরা পরিশেষে আপনাদের একটি কথাই বলতে চাই, এই পৃথিবীতে যুগে যুগে কিছু মানুষ মনে করে সে সবকিছু করতে পারে, আসলে কিন্তু তা নয়. আমাদের মহাবিশ্ব সূর্য চন্দ্র আকাশ বাতাস থেকে শুরু করেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা সবকিছু আল্লাহর হুকুমে চলে। আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটি বালুকণা এদিক সেদিক হতে পারে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুক আমিন।
তো বন্ধুরা তাহলে আজ এই পর্যন্ত, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আল্লাহ হাফেজ ।
0 Comments