আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব একজন লোভী যুবক এবং মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি শিক্ষনীয় গল্প নিয়ে. তো চলুন শুরু করা যাক।
মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এক যুবক এসে বলল, হে আল্লাহ নবী. আমি জীবজন্তু লালন পালন করি. আপনি দয়া করে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন. যাতে আমি তাদের সুখ ও দুঃখের কথা বুঝতে পারি. আর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারি. যুবকটির কথা শুনে হযরত মুসা (আঃ) বললেন সাবধান. এর থেকে বিরত থাকো. এর মধ্যে অনেক বিপদজনক ব্যাপার লুকিয়ে আছে. যা তুমি সহ্য করতে পারবে না.
কিন্তু যুবকটির নাছোড়বান্দা সে বারবার কাকুতি মিনতি সুরে আবদার জানাতে লাগলো. হজরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটা মঙ্গলজনক নয়, যুবকটি শেষে বললো আর বেশি কিছু না হয় অত্যন্ত গৃহপালিত মোরগ ও কুকুরের ভাষা বোঝার ব্যবস্থা করে দিন. তার এই মিনতি তে মুসা (আঃ) আল্লাহর কাছে কাছে এই ব্যাপারে দোয়া করলেন. আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করলেন. এবং যুবকটিকে জীবজন্তুর ভাষা বোঝার ক্ষমতা দান করলেন.
যুবকটি খুশি মনে বাড়ি ফিরে গেল. আর মনে মনে বলল এবার জীবজন্তুদের সব চালাকি ধরা চাপে পরের দিন ভোরে যখন বাড়ির হাঁস মুরগী ছেড়ে দেওয়া হলো তখন সেই যুবক মোরগের কথা শোনার জন্য বারান্দায় এসে বসলো বাড়ির কাজের মেয়ে তখন রাতের বেঁচে যাওয়া রুটির টুকরো উঠানে নিক্ষেপ করলো কুকুরটিও কাছে ছিল. এমন সময় মোরগটি ঝাঁপটি মেরে রুটির টুকরোটি মুখে পড়ে নিল.
কুকুরটি প্রতিবাদের সুরে মোরগটিকে বলল, রুটির টুকরো আমার ভাগে ছিল. তুই নিয়ে গেলি কেন? উত্তরে মোরগ বলল, একটু সবর কর, অবস্থা তারা বুঝতে পেরেছি, কালকেই আমাদের মনিবের সুন্দর ঘোড়াটা মারা যাবে. তখন তুমি মজা করে তার গোস্ট খেতে পারবে, বারান্দায় বসে থাকা যুবক তখন মোরগের কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেল. তারপর লোকসান এড়ানোর জন্য ঘোড়াটি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিল. পরের দিন ভোরে আবারও যখন উঠানে রুটির টুকরো ছড়ানো হলো তখন তার সাথে সাথে লুফে নিলো.
কুকুরটি সেদিনও বঞ্চিত হয়ে রাগ করে মোরগটিকে বলল, ধোঁকাবাজ কোথাকার কালকে রুটি নিলে. আজকেও নিয়ে গেলে কই ঘোড়া তো মরলো না. বরং মালিক তা অন্য জনকে িক্রি করে দিয়েছেন. জবাবে মোরগ বলল ঘোড়াটি সত্যিই মরেছে. তবে অন্য জায়গায়. অধৈর্য হয়ো না. কালকে মনিবের উটটি মারা যাবে. তখন তুমি মজা করে ইচ্ছে মত খেতে পারবে. উটের মৃত্যুর কথা শুনে মনেশান হয়ে গেল.
আর তৎক্ষণাৎ তা বাজারে বিক্রির জন্য পাঠালো. এবং নিশ্চিন্ত ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেল. পরদিন ভোরে আবারও রুটি ফেলা হলো সাথে সাথে মোরগ তখন রুটির টুকরো লুফে নিল. কুকুরটি আজও ব্যর্থ হল. তখন সে তাচ্ছিল্যে সুরে, মুরগিকে বলল, বড়ই প্রতারক দেখেছি তোকে. প্রতিদিন আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিস.
তখন মুরগ বললো, ধৈর্য হারা হইও না হে বন্ধু কাল দেখবে মনিবের গোলামটা মারা যাবে. তখন শিরনি ইত্যাদি করবে. তখন গোস্ট, পোলাও ইত্যাদি অনেক কিছুই তুমি খেতে পারবে. তখন মোরগের কথা শুনে, বেচাইন হয়ে গেল. তখন তৎক্ষণাৎ গোলাম টাকে অন্য একজনের কাছে পাঠিয়ে দিল. এবং বিরাট ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেল. আর মনে মনে ভাবল এই জীবজন্তুদের ভাষা বুঝে য়ে উপকার হলো.
এতে অনেক ক্ষতির থেকে বাঁচা গেলো. কিন্তু এতে যে জেনেবুঝে অন্যকে ক্ষতির সম্মুখীন করলো সেটা সে চিন্তা করলো না. চতুর্থ দিনের ভোরের কথা. রুটির টুকরো আজও একা লুফে নিল মোরগ অসহায় কুকুর রাগের চোটে মুরগি কে গালাগাল করতে লাগলো. মোরগ তাকে সান্তনার বাণী শুনিয়ে পড়লো. হে বন্ধু আজ একটু ধৈর্য ধরো কাল দেখবে মনিব নিজেই মারা যাবেন. কাল মারা গেলে পোলাও সিঁড়ি ইত্যাদি করবে. তখন তুমি পেট পুরে খেয়ে নিও.
আজ মোরগের কথা শুনে যুবকটি ভীষণভাবে বিচলিত হয়ে পড়ল. কাল যে সে মারা একথা শুনে অস্থির হয়ে গেল সে. আসলে আল্লাহ পাকের কুদরতের মাঝে, অনেক গোপন কথা লুকিয়ে থাকে. যা কেউ জানে না. কিন্তু মানুষ যখন সীমা লঙ্ঘন করে, তখনই যত সব বিপত্তি ঘটে. মাল সম্পদের শিবিরের মনিবের জান বেঁচে যেত এবং মুসিবত মালের উপর দিয়ে চলে যেত কিন্তু মনিব তা মানেননি.
তাই বিপদ তার নিজের উপরই চলে এসেছে. নিরুপায় যুবক তখন দৌড়ে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে হাজির হল. তাকে সকল ঘটনা খুলে বলল. তারপর মিনতি করে বলল হে আল্লাহ নবি. আমাকে রক্ষা করুন. বললেন আমি তো আগেই বলেছি, সেই বিষয়টি তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে না. তুমি কেমন স্বার্থপর. শুধু নিজের স্বার্থ দেখলে অপরের ক্ষতি দেখলে না. নিজের ক্ষতির কথা ভেবে সব বিক্রি করে দিলে অথচ যে তা কিনেছে সে যে ক্ষতির মধ্যে ড়তে যাচ্ছে, সেটা বিবেচনায় নিলে না এইজন্য বিপদ তোমার উপরে চলে এসেছে. এখন নিজেকে অন্য কারোর কাছে বিক্রি করে দাও. তাতেই তো ভালো, এতে অনেক অর্থ করি ও ধনসম্পদ লাভ হবে.
যুবকটি কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলো. এবং প্রাণ রক্ষার জন্য হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো. হজরত বললেন দেখো ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যাওয়ার পর তা কি আবার ও ধনুকে ঢোকে কখনোই না. তোমার মৃত্যুও অবধারিত হয়ে গেছে. এর থেকে তোমার আর রেহাই নেই. তবে আমি তোমার জন্য ঈমানের সাথে মৃত্যু দোয়া করছি. হজরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শেষ হতে না হতে যুবকটির শারীরিক পরিবর্তন শুরু হল.
এক বার বমি হল. তার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল. সাকরাতের এই সময়টিতে চারজন লোক তাকে ধরে বাড়িতে থেকে নিয়ে গেল. কিন্তু বাড়ি পৌঁছে গেল না. মৃদু এক ঝাকুনি দিয়ে তার প্রাণ উড়ে গেল. চিরদিনের জন্য. ধন সম্পদ সব পিছনে ফেলে. যুবকটি পরকালের পথে রওনা দিল.
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো এই শিক্ষণীয় ঘটনাটি? এবং এই ঘটনা থেকে কি শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছেন কমেন্টে জানিয়ে দিন. সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিদায় নিচ্ছি, আমার জন্য দোয়া করবেন এবং নিজেরা ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments