আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন. আজকের এই পোস্টটি তে আমরা দুই ভাই ও এক টুকরো হিরা, একটি শিক্ষণীয় ঘটনা সম্পর্কে বলতে চলেছি. যা শুনে আপনার মন ছুঁয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ. তো চলুন শুরু করা যাক।
বসরা শহরের এক গৃহস্থের দুই পুত্র ছিল. তাদের মধ্যে বড় জনের নাম হচ্ছে ও ছোট জনের নাম ছিল কাজিল. তারা দুজনে পেশায় ছিল ব্যবসায়. একবার ব্যবসায় তারা কিছু বাড়তি অর্থ লাভ করল. এবং মনে করলো যে তারা বিদেশে সফরে যাবে. তাই সময়মতো দিন তারিখ দেখে তারা দুই ভাই একসাথে বেরিয়ে পড়ল. তিন দিন সফরের পর তারা এক মুসাফির খানায় আশ্রয় নিল. সেখানে তারা রাত কাটিয়ে, পরদিন সকালে আবার যাত্রা শুরু করল. কিছুদূর এতেই তারা একটি নদীতে একটি পূটলি ভেসে যেতে দেখে সেটিকে উপরে তুলল.
পোটলি খুলে তারা অবাক হয়ে গেল. পোটলিতে এক হাজার সোনার মোহর ও দুইটি হিরে খন্ড পেয়ে তারা আল্লার প্রশংসা শুরু করলো স্বর্ণমুদ্রা ও হীরক খন্ড নিজেরা সমান ভাবে ভাগ করে নিল. এরপর আবার চলতে শুরু করলো. কিন্তু সঙ্গে এত অর্থ ও মূল্যবান হীরক নিয়ে চলা তারা নিরাপদ মনে করলো না. তাই দুজনে করে সিদ্ধান্ত নিল. যে ছোট ভাই এগুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে. আর বড় ভাই কিসরা নগরে যাবে. তাই বড় ভাই হাকিম বলল, এগুলো নিয়ে তুমি বাড়ি গিয়ে তোমার ভাবির হাতে দিবে. ছোট ভাই কাজ বাড়ি গিয়ে ভাইয়ের দেওয়া স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভাবীর কাছে দিল কিন্তু হীরক খন্ড না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিল. এই সম্পর্কে হাতেমের স্ত্রী কিছুই জানতে পারল না. একদিকে বড় ভাই হাতিম, নানা দেশ ঘুরে, বাণিজ্য করে টাকা পয়সা ও মালামাল নিয়ে তিন বছর পর দেশে ফিরে আসলো.
কয়েকদিন পর সেই স্ত্রীকে সোনার মোহর ও হিরক খন্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল যে, কাজিয়াম হিরক খন্ড দেয়নি. তখন কাজেমকে জিজ্ঞেস করলো হীরক খন্ডের খবর কি সেটা তুমি তোমার ভাবীর হাতে দাওনি কেন? কাজিম কসম করে বললো ভাই আপনার স্ত্রী মিথ্যা বলছে আমি তো হীরক খন্ড ভাবিকে দিয়েছি কাজিমের কথা বিশ্বাস হাতেম তার স্ত্রীকে তিরস্কার করলো হাতেমের স্ত্রী গালাগাল শুনে অপমানিত হয়ে স্বামীকে না জানিয়ে উক্ত শহরে একজন কাজীর কাছে চলে গেল. এবং অনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করে সুবিচার প্রার্থনা করলো কাজী তখন হাতেম ও কাজিমকে ডেকে আনলেন. এবং তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়ে সত্য কথা বলার জন্য অনুরোধ করলেন.
কাজী তখন কাজিমকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি যখন হীরক খন্ড স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করো তখন কোনো সাক্ষী ছিল কি? সে বললো হ্যাঁ দুইজন সাক্ষী ছিল. কাজেই সাক্ষীদেরকে আদালতে হাজির করার হুকুম দিলেন. কাজেম গিয়ে দুইজন লোককে কিছু অর্থ দিয়ে বলল, ভাই, তোমরা আমার সঙ্গে আসো, কাজির দরবারে তোমরা সাক্ষ্য দিবে যে তিন বছর পূর্বে, অমুক দিন তোমাদের উপস্থিতিতে, আমি আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে, পাঁচশো সোনার মোহর ও এক খন্ড হিরোপ দিয়েছিলাম. অর্থের বিনিময়ে সে দুই স্বাক্ষী কাজীর কাছে মিথ্যা সাক্ষ দিল. কাজী তখন সাক্ষীর পরিপ্রেক্ষিতে রায় দিলেন. যে হাতেমেয়ের স্ত্রীর কাছে হীরক খন্ড রয়েছে. হাতেমকে হুকুম দিলেন.
তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে. এমত অবস্থায় হাতেমের স্ত্রী নিরুপায় হয়ে বাদশার দরবারে গিয়ে কান্নাকাটি করে বিস্তারিত ঘটনা জানিয়ে সুবিচার চাই বাদশা বললেন, তুমি কাজীর কাছে গেলে না কেন সে বলল হুজুর আমি গিয়েছিলাম. কিন্তু সুবিচার পাইনি. এখন আপনার কাছে ও বিচার না পেয়ে, স্বামীর ঘরে থাকা আমার দায় হয়ে পড়বে. বাদশা তখন হাথেম ও কাজেম এবং সাক্ষীদয় কে দরবারে ডাকলেন এবং তাদের কাছে সব কিছু বিস্তারিত জানলেন কাজিম ও তার স্বাক্ষীরা আগের মতোই সাক্ষ্য দিল. বাদশা তখন হাতেম ও কাজিম দুই সাক্ষী ও স্ত্রীকে জেলহাজতে ঢোকালে তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সেল বা কক্ষ রাখার ব্যবস্থা করলেন. তারা প্রত্যেকে কিছু মোম দিয়ে হুকুম দিলেন হীরক খন্ডের আকৃতি তৈরি করো. তাহলে ছেড়ে দেওয়া হবে. হাতে ও কাজেম দুই ভাই মোম দ্বারা অভিন্ন আকৃতির হিরক তৈরী করলো. তার সাক্ষী হীরক এর আকৃতি হলো ভিন্ন ভিন্ন. এদিকে হাতে মেয়ের স্ত্রী কিছুই তৈরি করতে পারলো না. বাদশা সবাইকে ডেকে মম নির্মিত হীরক এর আকৃতি উপস্থিত করার নির্দেশ দিলেন. দুই ভাই ও সাক্ষীদয়ের তৈরি কৃত হীরক আকৃতি সম্মুখে পেশ করা হলো. দরবারে সকলেই দেখল যে, দুই ভাইয়ের হিরের এর আকৃতি এক কিন্তু সাক্ষীর হীরক এর আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন. তখন বাদশা ও দরবারের সকলেই বুঝতে পারলেন যে সাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ দিয়েছে. তারা হিরক আদৌ দেখেন নাই. তাই তাদের তৈরি হীরকের আকৃতিতে মিল নেই. তখন বাদশা বললেন. হাতেমের স্ত্রী তৈরি হীরক আকৃতি কোথায়? হাতেমের ইস্ত্রী তখন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল. হুজুর আমি তো হীরক কখনোই দেখিনি. আমি কিভাবে? হীরক আকৃতি তৈরী করবো. তাই আমি কিছুই তৈরি করতে পারিনি.
বাদশা এবং দরবারে উপস্থিত সকলেই বুঝলেন. ছোট ভাই কাজিম আমি হীরক খন্ড রেখে দিয়েছে. এবং অর্থের বিনিময়ে দুইজন মিথ্যা সাক্ষীও হাজির করেছে তাই বাদশার কথা মতো কাজের হিরক খন্ডতয় দরবারে হাজির করলো. এবং দুই হাতে, দুই কান ধরে, কসম করলো যে, আর কোনদিন মিথ্যা কথা বলব না. আমার অন্যায় হয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন. বাদশা তাকে মাফ করে দিলেন. বাদশা তখন দুই ভাইকে হীরক খন্ড দিয়ে বিদায় দিলেন. আর হাতেমেয়ের স্ত্রীকে তার সততা ও সাহসের জন্য পুরস্কৃত করলেন. আর সাক্ষীদয়কে মিথ্যা সাক্ষ দেওয়ার জন্য শাস্তি দিয়ে কয়েকখানায় পাঠিয়ে দিলেন. তৎপর কাজীকে ডেকে বললেন, আপনি সবদিক জেনে শুনে বুদ্ধি বিবেচনা করে বিচার করলেন না কেন? সত্য ঘটনা না জেনে সেই মহিলার কাছ থেকে হীরক খন্ড আদায় করতে বললেন. এরূপ রায় দেওয়া আপনার উচিত হয়নি.
তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই শিক্ষণীয় ঘটনাটি? কমেন্ট করে আমাকে অবশ্যই জানাবেন. আজ তাহলে এই পর্যন্তই. আপনারা ভালো থাকবেন,সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিদায় নিচ্ছি আসসালামুয়ালাইকুম আল্লাহ হাফেজ
0 Comments