ভূমিকম্প সম্পর্কে কয়েকটি বিস্ময়কর তথ্য, সারা বিশ্বে বড় বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে. ভূমিকম্প হয় বাংলাদেশেও. সম্প্রতি এই ধরনের ভূমিকম্পের সংখ্যাও বেড়ে গেছে. ভূমিকম্প হলে তার পরপরই এই নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা হয়. কিন্তু প্রাকৃতিক এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা তেমন কী জানি? চলুন জেনে নেওয়া যাক ভূমিকম্প সম্পর্কে কয়েকটি বিস্ময়কর তথ্য, তাহলে শুরু করা যাক।
সারা পৃথিবীতে বছরে লাখ ভূমিকম্প হয়. যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা, geological survey বলছে প্রত্যেক বছরে গড়ে সতেরোটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় রিক্টর স্কেলে যার মাত্রা সাতের উপরে. এবং আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় একবার. তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয়. এর অনেকগুলো হয়তো বোঝাই যায় না. বোঝা যায় না কারণ খুব প্রত্যন্ত এলাকায় এসব হয় অথবা সেগুলোর মাত্রা কম থাকে.
দুই, ভূমিকম্পের কারণে দিনের দৈর্ঘ্য কম বেশি হতে পারে. জাপানের উত্তর পূর্বে দুই হাজার নয় সালের এগারোয় March. একটি বড় ধরনের ভুমিকম্প আঘাত হানে যার মাত্রা ছিল আট দশমিক নয় এর ফলে পরিবর্তন ঘটে পৃথিবীর ভোরের বন্টনে এবং তার প্রভাবে, পৃথিবী ঘুরতে থাকে সামান্য দ্রুত গতিতে. আর তখন দিনের দৈর্ঘ্য কমে যায়. সেদিন দিন এক দশ আট মাইক্রো সেকেন্ড ছোট ছিল.
তিন, সানফ্রাসিস কোচ সরে যাচ্ছে লস এন্ড জেলেসের দিকে. যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিস্কোর শহর প্রত্যেক বছর গড়ে দুই ইঞ্চি করে লসেন্স জেলসের দিকে সরে যাচ্ছে. এই একই গতিতে বাড়ে আমাদের আঙ্গুলের নখ শহরের এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে Sun এন্ড্রয়েস, ফল্টের দুটো দিক ক্রমশ একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে. এ গতিতে চলতে থাকলে, এই দুটো শহর কয়েক লাখ বছর পর একত্রিত হয়ে যাবে
চার ভূমিকম্পের আগে পানি থেকে গন্ধ বের হয়. বিজ্ঞানীরা বলছেন ভূমিকম্পের আগে পুকুর খাল, বিল, হ্রদ, জলাশয়ের স্থির পানি থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে. এমনকি সেই পানি সামান্য উষ্ণও হয়ে উঠতে পারে. প্লেট সরে যাওয়ার কারণে মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস নির্গত য়ায় তার কারণে এটা হয়ে থাকে. এর ফলে ওই এলাকার বন্যপ্রাণীর আচরণেও পরিবর্তন ঘটতে পারে. ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণী বিজ্ঞান বলছে দুই হাজার নয় সালে ইটালিতে এক সময় এক ধরনের ব্যাঙ ভূমিকম্পের আগে সেখান থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল. এবং ফিরে এসেছিল ভূমিকম্পের পরে. বলা হয় এই ব্যাঙ পানির রাসায়নিক পরিবর্তন খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে.
পাঁচ ভূমিকম্পের পরেও পানির ঢেউ উঠতে পারে. ভূমিকম্পের পরেও পুকুরে কিংবা সুইমিং পুলের পানিতে আপনি কখনো কখনো ঢেউ দেখতে পারেন. একে বলা হয় অভ্যান্তরীণ তরঙ্গ. বিজ্ঞানীরা বলেছেন ভূমিকম্প হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে. কিন্তু তারপরও কয়েকঘন্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এই পানিতে তরঙ্গ অব্যাহত থাকে পারে. মেক্সিকোতে উনিশশো পঁচাশি সালে একবার ভূমিকম্প হয়েছিল. উনিশশো পঁচাশি সালে সেবার এই ম্যাক্সিকো থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে এরিজনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের পানি ছিটকে পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গিয়েছিলো.
ছয় ভূমিকম্পের কথা মনে রেখে ইনকাস শব্দতা ও জাপানি বাড়ি ঘর তৈরি. ভূমিকম্পের কারণে যাতে বাড়িঘর ধসে না যায় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ইনকামলের এবং জাপানী পাগোরা নির্মিত হয়েছিল. পাঁচশো বছর আগে ইনকার স্থাপত্য কর্মীরা যখন ম্যাচুপিছু শহরে নির্মাণ করে তারা বাড়িঘর নির্মাণের ব্যাপারে একটি আদিকালের জ্ঞান কাজে লাগিয়েছে. যাতে ঘন ঘন হওয়া ভূমিকম্পের হাত থেকে তাদের বাড়ি ঘর বেঁচে যেতে পারে.
সাত বেশিরভাগ ভূমিকম্পের উৎস প্রশান্ত মহাসাগর. পৃথিবীতে যত ভূমিকম্প হয় তার অধিকাংশ শতাংশই হয় ring of fire এলাকা জুড়ে. এই এলাকাটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত.
আট ভূমিকম্পের কারণে চিলির একটি শহর, দশ ফুট পশ্চিমে সরে যায়. দুই হাজার দশ সালে বড় ধরনের এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল. চিলির কনসেপ্টসিয়ান শহরে. রিক্তার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল আট দশমিক আট. এর ফলে পৃথিবীর শক্ত উপরি ভাগে ফাটল ধরে এবং শহরটি দশ ফুট পশ্চিমে সরে যায়.
নয় ভূমিকম্পে খাটো হয়ে যায় এভারেস্ট নেপালে দুই হাজার পনেরো সালের পঁচিশে এপ্রিল আঘাত হানে সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্প. এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়. কমে আসে হিমালয়ের অনেক পর্বতের উচ্চতাও. Mount Everest এর উচ্চতা কমে গিয়েছিল এক ইঞ্চির মতো.
দশ জাপানের পৌরণিক কাহিনীতে ভূমিকম্প হয়েছিল বড় আকারের এক catfish এর কারণে. এটা হচ্ছে জাপানি এক দ্বীপে মাটির নিচে চাপা পরে গিয়েছিল নামাজু নামের এক বিশাল catfish. পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে বলা হয় অনেক ভূমিকম্প হয়েছিল এই মাছটির কারণে. প্রাচীন গিকরা বিশ্বাস করতেন সমুদ্রের দেবতা পজিটন রেগে গিয়ে পৃথিবীর উপর আঘাত করলে ভূমিকম্প হতো
এগারো ভূমিকম্পের আগে প্রাণীর আচরণে পরিবর্তন ঘটে. ভূমিকম্পের ফলে যে শুধু ব্যাঙের আচরণের পরিবর্তন ঘটে তা নয় ইন্দোনেশিয়ায় দুই হাজার চার সালে সুনামির আগে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে তারা অনেক পশুপাখিকে দেখেছেন উঁচু এলাকার দিকে ছুটে যেতে. বিজ্ঞানীরা মনে করেন ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন পশু পাখিরা টের পেয়ে যায়.
বারো, ব্রিটিশ একজন বিজ্ঞানী ভূমিকম্পের কারণ চিহ্নিত করেছেন. ব্রিটেনের একজন প্রকৌশলী জন মাইকেল, ভূমিকম্পের কারণ উদঘাটন করেছেন. এ আবিষ্কার হয়েছে আঠেরোশো শতাব্দীর শুরুর দিকে. তাকে ভূকম্পন বিদ্যার একজন জনক হিসেবে ধরা হয়, তিনি বলেন ভূপৃষ্ঠের বহু নিচে শিলা কুন্ডের অবস্থানের পরিবর্তনের কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে.
তো আজ এতটুকু, আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments