হাবিল ও কাবিলের করুণ কাহিনী।

 


আসসালামু আলাইকুম   কাবিল ও হাবিল নামে দুই ভাইয়ের ঘটনা, ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ. ইসলামের ইতিহাস অনুসারে কাবিল ও হাবিলের মাধ্যমে প্রথম কুরবানী শুরু হয়. তাদের মধ্য পৃথিবীতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এবং তাদের মাধ্যমেই মৃতদেহ কবর দেওয়ার নিয়ম চালু হয়. হজরত আদম আলাই ওয়াসাল্লাম ও বিবি হওয়া আলাই ওয়াসাল্লাম উভয়ে জান্নাতে সুসজ্জিত বাগানে বসবাস করছিলেন. কিন্তু তাদের পিছু লাগলো ইবলিশ নামে এক পাপিষ্ঠ শয়তান. ইবলিশ চাইল তারা যেন সুখের জান্নাতে থাকতে না পারে. যতটা না সুখের জান্নাত থেকে বিতাড়িত করার ইচ্ছে ছিল ইবলিশের তার চেয়ে বেশি ইচ্ছে ছিল তারা যেন আল্লার দেওয়া আদেশ অমান্য করে তাকে নাখোশ করে. আদম ও হাওয়া আলায় ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহ একটি বিশেষ গাছের ফল খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলেন ইবলিশ বেছে বেছে ওই বিশেষ ফলটিকেই লক্ষ্য করল. দুজনকে প্ররোচিত করে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওই গাছের ফল খাইয়ে দিল. আদম ও হাওয়া আলাওয়াসালাম দৃশ্যত পাপ করে বসলেন. জান্নাতে পাপের স্থান নেই তাই শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন. বলা হলো পৃথিবীতে ভালো কাজ করে নিজেদের মর্যাদা আবার অর্জন করতে   পারলে তারা আবারও জান্নাতে ফিরে আসতে পারবেন. কিন্তু অশান্তি তার পরও রয়ে গেলো কারণ পৃথিবীতেও অস্তিত্ব বিরাজমান সেই পাপিষ্ঠ শয়তান ইবলিসের. ইবলিশ শয়তান তার শেষ চাওয়া হিসেবে আল্লার কাছ থেকে বিশেষ কয়েকটি ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছিলেন. অভিশপ্ত হওয়ার আগে ইবলিশ আল্লাহর অনেক ইবাদত করেছিল. এই ইবাদতের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তাকে তার চাহিদা অনুসারে এই ক্ষমতাগুলো প্রদান করেছিলেন. প্রাপ্ত ক্ষমতাগুলোর মধ্যে একটি হলো যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো স্থানে সে অবস্থান করতে পারবে. সেই হিসেবে আদম হাওয়ার পৃথিবীতে চলে আসা তার জন্য তেমন কঠিন কিছু নয়. যাইহোক পৃথিবীতে আগমনের পর, হজরত আদম আলাই ওয়াসাল্লাম ও বিবি হওয়া সন্তান জন্ম হতে লাগলো. ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে লাগলো পৃথিবীতে. কিন্তু এখানে দৃশ্যত একটি সীমাবদ্ধতা থেকে গেল. আদম ও হাওয়া (আঃ)  যেহেতু পৃথিবীর প্রথম মানবমানবী তাদের পরের প্রজন্মে যত সন্তানের জন্ম হবে তারা সকলেই হবে ভাই বোন. ইসলামী নিয়ম অনুসারে ভাই বোনের মাঝে কখনো বিয়ে হয় না. সেই হিসেবে এটিই হত পৃথিবীর শেষ মানব প্রজন্ম. তারপর মানব জাতি বিলুপ্ত হয়ে যেত কিন্তু এখানে তো পুরো মানব জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন. তাই বিশেষ একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে এর সমাধান করা হলো. বিবি  হাওয়ার গর্ভে তখন জন্ম নিত জোড়ায় জোড়ায়. প্রতি জোড়ায় একজন ছেলে আর এক মেয়ে জন্ম হতো. একই জোড়ার ছেলে ও মেয়েরা পরস্পরে বিয়ে করতে পারবে না. বিয়ে করতে হলে ভিন্ন জোরার কাউকে করতে হবে. কাবিল ও হাবিল ছিল ভিন্নজোড়ার. তাই তাদের ব্যাপারটি স্বাভাবিক নিয়মেই সমাধান হয়ে যায়. একজন আর একজনের জোড়ার মেয়েকে বিয়ে করবে. কিন্তু এখানে একটি সমস্যা দেখা দেয়. হাবিলের জোড়ার মেয়েটি তেমন সুন্দরী ছিল না. সেই তুলনায় কাবিলের জোড়ার মেয়েটি ছিল অনেক বেশি সুন্দরী. নিয়ম অনুসারে হাবিল, অধিক সুন্দরী মেয়েটিকে পায়. আর কাবিল পায় কম সুন্দরী মেয়েটিকে. কিন্তু কাবিল বেঁকে বসে. সে হাবিলের জোরার মেয়েটিকে বিয়ে করবে না. যেভাবেই হোক নিজের জোড়া সুন্দরী মেয়েটিকেই বিয়ে করবে. এমত অবস্থায় হজরত আদম আলাই ওয়াসাল্লাম একটি মীমাংসা করলেন. তাদের দুজনকে আল্লাহর নামে কুরবানী দিতে বললেন. যার কুরবানী আল্লাহ গ্রহণ করবেন তার ইচ্ছায় পূর্ণ  হবে. কার কুরবানী গৃহীত হলো আর কার কুরবানী গৃহীত হলো না তা কিভাবে বোঝা যায় তখনকার কুরবানী এখনকার কুরবানীর মতো ছিল না সে সময় কোনো জিনিস কুরবানী দিলে আসমান থেকে আগুন এসে ওই জিনিসটিকে পুড়িয়ে দিত. কোরবানির বস্তুকে ভূমি থেকে উপরে কোন ইস্থানে উপস্থাপন করা হতো. আকাশ থেকে আগুন এসে যদি বস্তুকে পুড়িয়ে দিত তাহলে বোঝা যেত আল্লাহ কর্তৃক কুরবানী গৃহীত হয়েছে. পিতা আদম (আঃ) এর দেওয়া মীমাংসা অনুসারে তারা উভয়ে কুরবানীর বস্তু উপস্থাপন করলো আল্লার কাছে. হাবিল একটি সুস্থ ও মোটা তাজা দুম্বা উৎসর্গ করলো আর কাবিল তার কিছু সবজি ও শস্য উৎসর্গ করলো তখন সবজি ও শস্য কুরবানির জন্য উৎসর্গ করা যেত কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায় হাবিল উৎসর্গ করেছিল উৎকৃষ্ট মানের দুম্বা আর কাবিলের শস্য ছিল নিকৃষ্ট মানের, আল্লাহ হাবিলের ড়বাণীকেই কবুল করলেন. উপর থেকে আগুন দিয়ে দুম্বাটিকে পুড়িয়ে নিলেন. কিন্তু কাবিলের শস্যকে কিছুই করলেন না. সেই হিসেবে বিয়ের নিয়ম আগের মতোই রইল. হাবিল বিয়ে করবে কাবিলের জোড়ার জন্ম নেওয়া মেয়ে কে. কিন্তু কাবিল এই অপমান সহ্য করতে পারল না. সে ভাবল হাবিলের জন্য তার কুরবানী আল্লাহ গ্রহণ করেননি. কুরবানীতে প্রত্যাঘাত হওয়াতে এবং স্ত্রী হিসেবে কাঙ্খিত মেয়েকে না পাওয়াতে সে অত্যন্ত ক্রুধম্বিত হয়ে গেল. ক্রোধের বশে হাবিলকে সে বলল, তোর ইচ্ছা কোন ভাবেই আমি পূরণ হতে দেব না. প্রয়োজনে তোকে হত্যা করব. যেন তুই আমার জোরার মেয়েটিকে বিয়ে করতে না পারিস. কোন কোন উৎস থেকে জানা তাকে এমন সর্বনাশা ভাবনার উস্কানি দিয়েছিলো সেই পাপিষ্ঠ ইবলিশ শয়তান. কাবিলের এমন আচরণে হাবিল অনেক সুন্দর উত্তর দিয়েছিল. সে বলেছিল আল্লাহ তাদের কুরবানী কবুল করেন. যার উদ্দেশ্য ভালো আর তুমি আমাকে হত্যা করার উদ্যেশে আমার গায়ে আঘাত করলেও আমি তোমাকে কিছু করবো না কারণ আমি আমার প্রতিপালককে ভয় করি. কিন্তু এই কথাই কাবিরের উদ্দেশ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না. ক্রোধের বশীবর্তী হয়ে সে হত্যা করলো তার আপন ভাইকে এর পরই কাবিলের মন গলে যায় এবং অনুভব করে আহারে কত বড় ভুল করে ফেলল সে. নিজের ভাইকে নিজের হাতে মেরে ফেলল. এর চেয়ে বড় ধৃষ্টতা আর হতে পারে ভেতরে ভেতরে সে অনেক অনুতপ্ত হলো এবং নিজের অপকর্ম কিভাবে ঢাকবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল. তখনও মৃতদেহ সৎকারের ব্যাপারে কোন নিয়ম তৈরি হয়নি. কারণ এর আগে মনুষের মৃত্যু ঘটেনি. মৃত দেহটিকে নিয়ে কি করবে? এ নিয়ে যখন সে চিন্তায় মগ্ন. তখন দেখলো একটি কাক তার ঠোঁট দিয়ে ঠোঁটরে ঠুঁকরে একটি গর্ত করলো. তারপর সেই গর্তে একটি মৃত কাককে টেনে এনে কবর দিয়ে দিল. এটি দেখে কাবিল ভাবলো তাকেও হয়তো এভাবে কবর দিতে বলা হচ্ছে. তাই একটি গর্ত করে সে তার ভাইকে কবর দিয়ে দিল. ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এটিই ছিল মানবজাতির প্রথম কবর কোন কোন উৎস থেকে জানা যায় কাক দুটি ছিল ফেরেশতা এবং এদেরকে আল্লাহই পাঠিয়েছিলেন. যেন এদের দেখে কাবিল শিখতে পারে. অনেকে দাবি করে থাকে হাবিলের কবর এখনো দেখা যায়. এবং এটি সিরিয়ার দামেশকে অবস্থিত. 

Post a Comment

0 Comments