ইরান কিভাবে এত শক্তিশালী দেশ হলো?

ইরানের পতাকা  


 বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং মধ্য প্রাচ্যে শক্তিশালী দেশ ইরান. পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম petroleum রপ্তানিকারক দেশ ইরান. এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম petroleum মজুতকারক দেশও ইরান. পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সতেরোটি দেশ আছে. তার মধ্যে ইরানকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় ইজরাইল. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকান নজরে পড়ে যায় দেশটি. কিন্তু কেন? উনিশশো ষাট সালে যেই ইরানের GDP ছিল একশো বিরানব্বই ডলার. দুই হাজার বারো সালে সেই ইরানের GDP বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার নয়শো ডলার কিন্তু কিভাবে? উনিশশো আশির দশকে যে দেশকে চুষে খেয়েছে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা আর সেই আমেরিকায় ইরানের সাথে বৈঠক করার জন্য ঘুরছে . উনিশশো ষাটের দশকে বড় কোন সেনাবাহিনী না থাকলেও বর্তমানে তাদের আছে বিশ্বের চোদ্দতম শক্তিশালী সেনাবাহিনী. বর্তমানে শুধু ইরান বাদে মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশে সেনা ঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার. তবুও ইরানকে থামিয়ে দিতে পারেনি আমেরিকা. এবং শত নিষেধাজ্ঞা দিয়েও দমাতে পারেনি যাত্রা. মধ্যপ্রাচ্যের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইরান. কোন বাধাই ইরানের কাছে কিছু নয়. কিন্তু কিভাবে এত কঠিন কাজগুলো এত সহজে করছে জানতে হলে পোস্টটি পড়তে থাকুন শেষ  পর্যন্ত . ইরানের ইতিহাসকে একটি পোস্টে  বলে শেষ করা যাবে না. এসব ইতিহাসের পেছনে রয়েছে আজকের ইরানের দাঁড়িয়ে থাকার গল্প. সতেরোশো শতকের শেষের দিকে শাহেনশা বংশের অধীনে ইরান পরিচালিত হতে থাকে. ইরানের শাহেনশাহ বংশের শেষ রাজা ছিলেন মোহাম্মদ রেজা সাহা পল্লবী. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই পুরো ইরান জুড়ে বিভিন্ন খনিজ  সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়. যেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল petroleum. Petroleum এমন সন্ধান পাওয়ার পরই ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার সৈরশাসক এবং তাদের কোম্পানিগুলো আস্তানা গাড়তে শুরু করে ইরান জুড়ে. একরকম তাদের কাছে মাথা নত করেই মোহাম্মদ রেজাসাহা পল্লবী তাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা করে দিতে থাকে. ফলে ইরানের সাধারণ জনগণ রেজাশাহ পল্লবীর উপর ক্ষুব্ধ হতে থাকে. সে সময় মহম্মদ মুসাদ্দেক নামের একজন রাজনীতিবিদ ঘোষণা দেন, যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিনি কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ত করবেন. তার এই কথায় ইরানের জনগণ আসার আলো দেখতে পায় এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করে. তার ক্ষমতা গ্রহণের ফলে এই দুই দেশের ব্যবসা, রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল. এবং এই দুই agency র নীল নকশায় কুইয়ের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়. ফলে আবারও ক্ষমতায় আসেন মহম্মদ রেজা এবং ইংল্যান্ড আমেরিকার ব্যবসা আগের মতো চলতে থাকে. দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আমেরিকার মদতপুষ্ট এবং অত্যাচারিত নেতায় পরিণত হন. অতিরিক্ত অত্যাচারের ফলে সাধারণ মানুষের মনে তার প্রতি ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে. এমন গোলযোগের মধ্যে আয়াতুল্লা খামিনি নামের একজন ধর্মীয় নেতার আবির্ভাব হয়. উনিশশো আটাত্তর সালে তার ডাকে সারা দিয়ে লক্ষ লক্ষ ইরানি রাস্তায় নেমে আসে. আয়াতুল্লা খামিনের এই leadership কে প্রথমে কোনো পাত্তাই দেননি মোহাম্মদ রেজা. কিন্তু খুব দ্রুত পরিস্থিতি এতো বদলে যায় যে উনিশশো আটাত্তর সালে তেহেরান এর রাস্তায় রীতিমতো জনবিস্ফোরণ শুরু হয়. সত্তর থেকে আশি লক্ষ মানুষের বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়ে রীতিমতো মহম্মদ রেজার গতিতে লাল বাতি ধরিয়ে দেন খামিনী. সেই সমাবেশের পর মূলত ইরানের সাধারণ মানুষ বিপ্লব কি জিনিস তা জানতে শুরু করে. একই সময় ইরানে অবস্থিত American এম্বাসিতে ইরানের সাধারণ জনগণ হামলা করে. তাদের উদ্ধার করতে আমেরিকা একটি গোপন অপারেশন চালায়. যার নাম ছিল ঈগল ক্লোর. কিন্তু মরুভূমির দেশ ইরানে বিভিন্ন কারণে অপারেশনটি ব্যর্থ হয়ে যায়. সেই সাথে শুরু হয় রেজাহটাও আন্দোলন. এবং আমেরিকানদের প্রতি বিদ্বেষ . কোন উপায় না পেয়ে মহম্মদ রেজার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেন. কিন্তু তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা. তাই তিনি প্রথমে পারিজমান  ইতালি. কিন্তু ইতালি তাকে চরম অপমান করে তাড়িয়ে দেয়. এরপর তিনি পানামা গিয়েও কোন ধরনের জায়গা পাননি. পরবর্তীতে মিশর তাকে আশ্রয় দেয়. আয়াতুল্লাহ খামিনের হাত ধরে শুরু হয় ইরানের নতুন অধ্যায়. খামিনি ক্ষমতায় এসে রাজতন্ত্র বাতিল করে গণতন্ত্রের প্রচলন করেন শুধু ইরান নয় মধ্য প্রাচ্যেও এটা ছিল বিরল একটি দৃষ্টান্ত. ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়, ইরানও তাই করেছিল এই অভ্যুত্থানের পরে ইরান একদম অন্য ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়. কারণ ইরান জানতো তাদের উপরে আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসন্ন. এবং হয়েছিলও তাই. সামরিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অসংখ্য নিষেধা গায়ে পরে ইরান. রীতিমতো তাদের এক ঘরে করে ফেলেছিল আমেরিকা. হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া তাদের কাছে ব্যবসা করার মতো তেমন কোনো দেশ ছিল না. তাই নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থেই শিক্ষা মানবসম্পদের উন্নয়ন প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার সামরিক সক্ষমতা উন্নয়নে জোর দেয় ইরান. ফলে এত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরানের পরিবর্তন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চোখে পড়তে থাকে. যদিও সময় ইরান এবং ইরাকের দীর্ঘ আট বছরের যুদ্ধের ইতিহাসও রয়েছে. মূলত আমেরিকার পক্ষ থেকে ইরানকে যতগুলো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলো রীতিমতো ইরানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে. সামরিক অস্ত্র কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরে এরা নিজেরাই অস্ত্র বানাতে শুরু করে. ইরান এযাবৎ কালে যত উন্নতি করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সামরিক খাত. বর্তমানে এমন কোনো সামরিক অস্ত্র নেই যা ইরান বানাতে পারে না. নিজস্ব প্রযুক্তিতে অস্ত্র তৈরি করায় আমেরিকার মতো দেশের কাছেও ইরান একটি গোলকধাঁধা. তারা কোন অস্ত্র নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে তা জানেনা আমেরিকা তাই তারা ইরানকে এত ভয় পায়. আমরা সবাই জানি ইরান মূলত পেট্রোলিয়াম উৎপাদন এবং রপ্তানিকারক দেশ. পেট্রোলের পাশাপাশি তাদের জিডিপির অন্যতম অর্থ যোগানদাতা ম্যানুফ্যাকচারিং . ইরানের মর্জিডিপির দশ শতাংশ আসে এই খাত থেকে. শতভাগ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম. সেভকো, ইরান ক্ষুদ্র, বাহান এর মতো কোম্পানি বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এই কোম্পানি গুলো হয়তো টাটা টয়োটার মতো নামিদামি কোম্পানি হতে পারতো হস্তশিল্পী ইরানিরা রীতিমতো মাস্টার ক্লাস. মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় হস্তশিল্প ইরানে অবস্থিত. এছাড়া মশলা উৎপাদনে ইরান যেকোনো দেশ থেকে বহুগুণে এগিয়ে আছে. পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মশলা জাফরানের নব্বই শতাংশ এদেশেই উৎপাদিত হয়. অন্যান্য দেশের চেয়ে সংস্কৃতি চর্চাও পিছিয়ে নেই ইরান. এবং এস এপারেশন নামে দুইটি চলচ্চিত্রই অস্কার জিতেছে বর্তমান বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম মজুতকারী দেশ ইরান. কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান তাদের উৎপাদ সব petroleum বিক্রি করতে পারে না এজন্য তাদের মজুদ এত বেশি . আশির দশকের দিকে ইরানি শিক্ষার্থীদের উপর ইউরোপ এবং আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞা চলে আসে. ফলে ইরান তাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে. উন্নত মানের ল্যাব স্থাপনের উন্নত শিক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন তা সব কিছুরই ব্যবস্থা করেছিল ইরান সরকার. ফলে খুব দ্রুতই ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো মানের স্টুডেন্ট এবং ভালো মানের ট্যালেন্ট বেরিয়ে আসতে থাকে. বিভিন্ন ধরনের নি ধাক্কায় পরে ইরান পিছপা না হয়ে নিজেদের মতো সমাধান খুঁজে নিয়েছে. উদাহরণ স্বরূপ মানববিহীন ড্রোনের কথাই বলা যায়. যে ড্রোন প্রযুক্তিতে আমেরিকা পৃথিবীর সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে. সে একই প্রযুক্তিতে ইরানে আমেরিকার পাল্লা দিচ্ছে. একইভাবে অর্থনৈতিক  দিক থেকেও অনেক এগিয়ে গেছে ইরান. যার ফলে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে ইরান. 



Post a Comment

0 Comments