💡 আমার পথ গল্পটি বা প্রবন্ধটির মূলভাব বা পাঠ পরিচিত । কবি পরিচিতি কাজী নজরুল ইসলাম । -------Alhadi HB

 

 সাহিত্যপাঠ পাঠ - পরিচিতি প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের সুবিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ' রুদ্র - মঙ্গল ' থেকে সংকলিত হয়েছে । “ আমার পথ ” প্রবন্ধে নজরুল এমন এক ' আমি'র আবাহন প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ ; সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক অসংকোচ । 


তাঁর এই ' আমি ' - ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছ্বাস জাগায় । নজরুল প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘ আমি’র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন ; একইসঙ্গে , এক মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে ‘ আমরা ' হয়ে উঠতে চেয়েছেন । স্বনির্ধারিত এই জীবন - সংকল্পকে তিনি তাঁর মতো আরও যারা সত্যপথের পথিক হতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশে ছড়িয়ে দিতে চান । এই সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু । 

তিনি তাই অনায়াসে বলতে পারেন , ' আমার কর্ণধার আমি । আমার পথ দেখাবে আমার সত্য । ' রুদ্র - তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে নজরুলের এই ' আমি ' সত্তা । তাঁর পথনির্দেশক সত্য অবিনয়কে মেনে নিতে পারে কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করে না । 


সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখেছেন যে , সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা , আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব । নজরুলের কাছে এই ভগ্ন আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয় । এর পরিবর্তে তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান ; কেননা তাঁর বিশ্বাস- সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা । সম্ভব ।


 নজরুল এই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে , তিনি ভুল করতে রাজি আছেন কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন । ভুল জেনেও তাকে ঠিক বলে চালিয়ে দেবার কপটতা কিংবা জেদ তাঁর দৃষ্টিতে ভণ্ডামি । এই ভুল ব্যক্তির হতে পারে , সমাজের হতে পারে কিংবা হতে পারে কোনো প্রকার বিশ্বাসের । তবে তা যারই হোক আর যেমনই হোক এর থেকে বেরিয়ে আসাই নজরুলের একান্ত প্রত্যাশা । তিনি জানেন , এই বেরিয়ে আসা সম্ভব হলেই মানুষের




 সঙ্গে মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটানো সম্ভব হবে । মনুষ্যত্ববোধে জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে , এক ধর্মের সঙ্গে অপর ধর্মের বিরোধ মিটে যাবে । সম্ভব হবে গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা ; আর এই ঐক্যের শক্তি হলো সম্প্রীতি । এই সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী হলে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা বাড়ে । ভিন্ন ধর্ম - মত - পথের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগে । আর এই সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট মানব সমাজ গড়ে তোলা মূল সম্ভব । ) 



আমার পথ কাজী নজরুল ইসলাম লেখক - পরিচিতি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি । তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে মে ( ১১ ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ ) জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ , মায়ের নাম জাহেদা খাতুন । সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে নজরুল আমৃত্যু সকল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার , প্রতিবাদী । এজন্য বাংলা সাহিত্যের ' বিদ্রোহী কবি ' হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত । 


আবার একই সঙ্গে কোমল দরদি মন নিয়ে ব্যথিত বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি । এক হাতে বাঁশি আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন নজরুল ; আর এসেই প্রচলিত শিল্পধারাসমূহকে পাল্টে দিয়ে নতুন বিষয় ও নতুন শব্দে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে করেছেন সমৃদ্ধতর । দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুলের কর্মজীবনও ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় ।


 মসজিদের ইমামতি , লেটোর দলে যোগদান , ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগদান , সাম্যবাদী ধারার রাজনীতি , পত্রিকা সম্পাদনা কিংবা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়াসহ বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতায় তাঁর জীবন ছিল পূর্ণ । মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় এই ঋদ্ধ ও সম্ভাবনাময় জীবন আমৃত্যু নির্বাক হয়ে যায় । 


বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে নজরুলকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে সসম্মানে এদেশে বরণ করে নেওয়া হয় । এর কিছুকাল পরে কবির মৃত্যু হলে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয় । 


কবি হলেও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তিনি বিচরণ করেছেন । তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে ' বাঁধনহারা ' , ' মৃত্যু - ক্ষুধা ' , ' কুহেলিকা ' এবং গল্পগ্রন্থের মধ্যে ' ব্যথার দান ' , ' রিভের বেদন ' , ' শিউলিমালা ' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । ' যুগ - বাণী ' , ‘ দুর্দিনের যাত্রী ’ , ‘ রুদ্র - মঙ্গল ’ , ‘ রাজবন্দির জবানবন্দি ' তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট ( ১২ ই ভাদ্র ১৩৮৩ ) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন । The

Post a Comment

0 Comments