বনি ইসরাইলের এক লোক ছিলো যার বিবি খুব সুন্দরী রূপবতী ছিল. সে তার বিবির প্রতি খুবই আসক্ত ছিল. যখন তার বিবি মারা গেলেও তখন সে খুবই ব্যাথিত হলো এবং দীর্ঘদিন যাবৎ সে সর্বদা তার স্ত্রীর কবরের কাছে বসে থাকতো আর অশ্রু বয়ে পড়তো. ঘটনা ক্রমে একদিন হযরত ইসা আঃ এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন. ইসরাইলি লোকটি পারেশানি দেখে তিনি তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন. ইসরাইলে নিজের ঘটনা খুলে বললেন জানতে চাইলেন তুমি কি চাও আমি তোমার বিবিকে জীবিত করে দিই?
লোকটি বলল জিহা সেটি হলে তো খুবই ভালো হয়, আমি তো মন থেকে এটি আমি তাকে খুবই ভালোবাসতাম. আমাকে একা রেখে সে চলে যাওয়ার পর থেকে, আজ দীর্ঘ কয়েকটি মাস নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি. এই কবরের পাড় ছাড়া আমার আর পৃথিবীতে কোন স্থানই ভালো লাগে না. হযরত ইসা আঃ এই আশিক স্বামীর জন্য তার স্ত্রীকে জীবিত করার জন্য কবরের লাশকে লক্ষ্য করে আওয়াজ দিলেন সাথে সাথে একজন হাফ কৃষ্ণাঙ্গ গোলাম উঠে আসলো যার নাক, চোখ, মুখ সহ শরীরের অন্যান্য ছিদ্র থেকে ভয়ঙ্কর আগুনের শিখা বের হচ্ছিল.
হযরত ইসা আলাইহি সাল্লামকে দেখেই গোলামটি কালিমা পড়লো আর সাথে সাথে তার গায়ের আগুন নিভে গেল. ইসরাইলি এই অবস্থা দেখে বলল হুজুর আমার ভুল হয়ে গেছে আমার বিবির কবর তো অন্যটা. আসলে দীর্ঘ দুইটি মাস ধরে কান্নাকাটি করতে করতে কোন কবরের সামনে যে আমার অবস্থান রয়েছে আমি সেটি ভুলে গিয়েছি. এটা শুনে হযরত ওই গো কে হুকুম দিলেন তুমি তোমার কবরে আল্লাহর হুকুমে চলে যাও. সাথে সাথে সে লাশ হয়ে লুটিয়ে পড়লো.
এখানে উল্লেখ্য যে প্রথম এই লোকটি যখন মৃত্যুবরণ করেছিল সে কাফের হয়ে মরেছিল. কিন্তু দ্বিতীয়বার হজরত ইসা রহুল্লাকে দেওয়া আল্লাহর বিশেষ ক্ষমতায় সে জীবিত হয়ে পুনরায় আবার ঈমান নিয়ে মৃত্যু বরণ করলো.
এখন ইসা আলাইহি সালামের উপর ইমান গ্রহণ করায় সে ঈমানদার হয়ে কবরও চলে গেল. এবং তার কবরকে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হল. হযরত অন্য কবরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং হুকুম করলেন হে কবরের অধিবাসী আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে যাও. এবার সঠিক কবরের সামনে, হজরত নির্দেশনা পাওয়া মাত্র সাথে সাথে কবর ফেটে ভেতরে থেকে এক অনিন্দ্য সুন্দরী মহিলা মাথা থেকে ধুলা ঝারতে ঝাড়তে উঠে আসলো. মহিলাকে দেখে ইসরাইলের লোকটি বলে উঠলো, হে রহুল্লাহ হে আল্লাহর নবী এটাই আমার বিবি, অতঃপর হজরত অনুমতিক্রমে লোকটি তার বিবিকে নিয়ে বাড়ির পথ ধরলো.
কিন্তু দীর্ঘদিন নির্ঘুম রাত কাটানোর তার প্রচন্ড ঘুম পেলো. লোকটি তার বিবিকে বলল, তোমার কবরের সামনে দীর্ঘ দুইটি মাস কান্নাকাটি ও নির্ঘুম সময় কাটাতে কাটাতে, আমি প্রায় শেষ হয়ে গেছি. তাই আমি কিছু সময় আরাম করে নিতে চাই তার স্ত্রী সাথে সাথে সম্মতি দিল লোকটি, রাস্তার পাশেই শ্রান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে তার বিবির উরুতে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল. গভীর ঘুমে সে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল. এমন সময় এক রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিল. রাজকুমারটিও ছিল.
খুব সুদর্শন ও সুঠাম দেহের অধিকারী. তার সাথে ছিল অনেক লয় লস্কর স্বর্ণ গহনা থেকে শুরু করে দুনিয়াবী অনেক আসবাবপত্র. তাকে দেখে সেই ইসরাইলি বিবি নিজেই আসক্ত হয়ে গেল. এবং রাজকুমারের প্রেমে পাগল হয়ে গেল. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে, সে ইসরায়েলি স্বামীর মাথাকে নিজের উরু থেকে নামিয়ে রেখে রাজকুমারের সামনে গিয়ে হাজির হলো. রাজকুমারও তখন তাকে দেখলো সেও তাকে পছন্দ করে ফেলল.
এবং সে মহিলার সম্মতি পেয়ে তাকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে নিল এবং রাজমহলের দিকে রওনা হলো. ইসরাইলের লোকটি দীর্ঘ দুই দিনের ঘুম ভাঙ্গার পর বিবিকে পাশে দেখতে না পেয়ে, সে আবারও চিন্তিত হয়ে পড়ল. অবশেষে ঘোড়ার পায়ে চিহ্ন অনুসরণ করে করে রাজমহলে পৌঁছে গেলো সে সেখানে তার বিবিকে রাজকুমারের সাথে আনন্দ আয়েশ করতে দেখতে পেল ইসরায়েলি ক্রুদ্ধ হয়ে রাজকুমারকে বলল এটা আমার বিবি দয়া করে আপনি তাকে ছেড়ে দিন. রাজকুমার কিছু বলার আগেই মহিলাটি বলে উঠলো, আমি তোমার বিবি নই. আমি রাজকুমারের বাঁদি.
সে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে স্ত্রীর জন্য সে দীর্ঘ দুইটি মাস কবরের পাশে কান্নাকাটি করে নিজের জীবনকে ধ্বংস করছিল সে স্ত্রী আজ আল্লাহ পাকের দেওয়া হজরত ইসা আলাইহি সালামের বিশেষ ক্ষমতার বলে কবর থেকে উঠে তার সাথেই বেইমানি করল? ইতিমধ্যে রাজকুমার, তাকে গর্জন দিয়ে বলে উঠল, তোমার কত বড় স্পর্ধা তুমি আমার বাঁ দিকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছ?
ইসরাইলের খুব অনুনয় করে খোদার কসম এটা আমার বেবি তার মৃত্যুর পর হযরত আমার জন্য তাকে জীবিত করে দিয়েছেন. আমি দীর্ঘ দুইটি মাস তার শোকে শোকাহত ছিলাম. এমন সময় হজরত সেখানে আগমন করলেন. তাকে দেখে ইসরাইলে বলল, হে রুহুল্লা, হে আল্লাহর রসুল, আল্লাহর বন্ধু, এই মহিলাটি কি আমার বিবি নয়? যাকে আপনি আমার জন্য জীবিত দিয়েছিলেন আল্লাহ পাকের হুকুমে. হজরত বললেন আহা, এইতো সেই মহিলা এই কথা শুনে মহিলাটি বলল লোকটি মিথ্যাবাদী.
আমি এই রাজকুমারের বাদী হজরত বললেন তুমি কি সেই মহিলা নও যাকে আমি আল্লাহর হুকুমে জীবিত করেছিলাম? মহিলাটি বলল হে খুদার কসম আমি সেই মহিলা নই এভাবে সে মহিলাটি আকুতি মিনতি করতেই থাকলো. অতঃপর হজরত বললেন যেই জীবন আমি আল্লাহর হুকুমে তোমাকে দিয়েছিলাম সেই জীবন তুমি ফেরত দাও. এ কথা সে মহিলার কানে যাওয়ার সাথে সাথে মহিলাটি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে হঠাৎই নিথর লাশ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ল.
সে ঈমানদার হয়ে উঠেছিল ঠিকই কিন্তু এখন হযরত কে অমান্য করে কবরে গেল. হজরত বললেন যদি কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখতে চায় যে কিনা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে কিন্তু জীবিত হয়ে ইমান গ্রহণ করে তাহলে সেই যেন সেই হাফশি গোলামকে দেখে যে একবার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল ঠিকই আবার জীবিত হওয়ার পর ঈমানদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলো আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখতে চায় যে ঈমানের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো ঠিকই কিন্তু আল্লাহ পাক তাকে দুনিয়ার নাজ নিয়ামত দেওয়ায় সে আবার দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে অন্ধ ভক্তিতে মরীচিকার পিছনে দৌড়াত থাকলো নিজ স্বামীর সাথে বেইমানি করল করল আল্লাহর পাঠানো তার রসুলের সাথে.
আল্লাহ পাক আবার তাকে জীবিত করে, অতঃপর সে কুফুরি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে. সে যেন এই মহিলাকেই দেখে. এই ঘটনা থেকে সেই ইসরাইলের লোকটি কসম খেয়ে বলল, আমি আর কক্ষনো বিয়ে করবো না. কথাটি বলে এসে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে গেল. এবং আল্লাহর ইবাদত করতে করতে বরণ করলো. আল্লাহ তাকে রহম করুন. এবং এই গল্প থেকে আমাদের প্রত্যেককেই শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন. আমিন.
বন্ধুরা তাহলে আজ এই পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সবার সাথে শেয়ার করবেন আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments