![]() |
তাজমহল |
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা কেমন আছেন আপনারা সবাই মধ্য যুগের সপ্ততাশ্চর্য তাজমহল সম্পর্কে আপনারা সবাই জানেন মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার দ্বিতীয় স্ত্রী আর্যমান বানু বেগম অর্থাৎ মমতাজের স্মৃতিতে এই অপরূপ সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন. ও স্ত্রীর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়ে তার স্মৃতি অটুট রাখতে শাহজাহান এই তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন. মূল ভবনটি নির্মাণ শেষ হয় ষোলোশো আটচল্লিশ খ্রিস্টাব্দে এবং এর চারপাশের বাগান এবং অন্যান্য স্থাপত্য শেষ হয় ষোলশ তিপ্পান্ন খ্রিস্টাব্দে. ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে পরিচিত এই তাজমহল নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় বিশ বছর. উনিশশো তিরাশি সালে এই তাজমহলকে UNESCO থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বলে ঘোষণা করা বিশ্বের সব স্থান থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন এই তাজমহল দেখতে কিন্তু এই তাজমহল লুকিয়ে আছে কিছু অজানা এবং গোপন রহস্য যেগুলো আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাবাবে তাই চলুন আজ জেনে আসি এই অপরূপ সুন্দর তাজমহলের কিছু গোপন এবং অজানা রহস্য যেগুলো কখনও কোন মানুষের কৌতূহল মেটায়নি তো চলুন শুরু করা যাক.
এই তাজমহলের মূল নকশাকারীকে তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে. কিন্তু তারপরেও ওস্তাদ আহমেদ লাহিড়ী এবং তার দলকে এই মহলের স্থাপত্যশিল্পী হিসেবে বিবেচনা করা হয়. বেগম মমতাজ তার চতুর্দশ সন্তান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন. শোনা যায় বিবাহের আগে জ্যোতিষীদের গণনায় শুভদিন না পাওয়ায় সম্রাট প্রায় পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছিলেন মুমতাজমহলকে বিবাহ করার জন্য. দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সম্রাট শাহজাহান মমতাজকে বিবাহ করেন. এই প্রিয় স্ত্রীকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়েই তিনি নির্মাণ করেছেন এই স্মৃতি সৌধ.
তাজমহলের উপরে রয়েছে গম্বুজ. মার্বেল পাথরটি নির্মিত এই গম্বুজটি, তাজমহলের প্রধান আকর্ষণ. গম্বুজটির আকৃতির কারণে একে পেঁয়াজ গম্বুজ কিংবা পেয়ারা গম্বুজ বলে আখ্যায়িত করেন অনেকে. এই গম্বুজটির উপরের দিকটি সাজানো হয়ে একটি পদ্মফুল দিয়ে. যেটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে. এই বড় গম্বুজটির চার দিক ঘিরে অবিকল আরো চারটি ছোট আকৃতির গম্বুজ রয়েছে যেগুলোর উপরিভাগ কাসা বা তামার দণ্ড দ্বারা সজ্জিত. তাজমহলের দেওয়ালে রয়েছে পাথরের খোদাই করা অনেক সূক্ষ্ম এবং আকর্ষণীয় কারুকার্য. এই তাজমহলকে রক্ষার জন্যও কম কষ্ট করতে হয়নি. একবার এই তাজমহলের উপরের গম্বুজটিকে পুরোপুরি বাঁশ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়. কে অনেক ওপর দিয়ে দেখলে মনে হবে. এটা করার একটাই কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিমান হামলায় যাতে এই তাজমহলের কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়. কারণ ওপর থেকে দেখলে এই তাজমহলকে বাশর্জার বলে মনে হবে. এবং ার ওপর বোমা হামলা করা হবে না. শুধু এই বিশ্বযুদ্ধই নয় এই তাজমহলকে অনেকবারই কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য.
এই তাজমহলের পাশে যে চারটি শোরুমিনার দেখতে পান দেখতে লম্বাকার হলেও প্রকৃতপক্ষে কিন্তু মোটেও সোজা কিংবা লম্বাকার নয়. এই চারটি মিনার চারিদিকে একটু বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে. তাতে ভূমিকম্পে এই মিনার ভেঙ্গে তাজমহলের ওপর না পড়ে. এই তাজমহল নির্মাণ করা হয় অত্যন্ত দামি পাথর দিয়ে যে পাথর গুলো চীন, পারস্স্য তিব্বত এবং শ্রীলঙ্কা থেকে আনা হয়েছিল, এবং এই পাথরগুলো বর্তমানে কোথাও খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল শুনলে অবাক হবেন এই তাজমহলকে একবার বিদেশির কাছে একবার বিক্রয় করে দেওয়ার সাহসও করেছিল এক চোর. এছাড়াও কলকাতার ভিক্টোরিয়াও এই তাজমহল বিক্রয় করে দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়.
শোনা যায় শাহজাহান তাজমহলেরই পাশাপাশি একটি কালো তাজমহল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন. কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন তারই ছোট পুত্র ঔরঙ্গজেব. তিনি পিতার এই সিদ্ধান্তের কথা জেনে নিজের পিতাকেই বন্দি করলেন. এবং মৃত্যু পর্যন্ত শাহজাহান বন্দি হয়ে থাকেন অজানা এক কারাগারে. আর সেই কারাগারের একটি ছোট্ট জানালা দিয়ে তিনি তাকিয়ে থাকতেন তার সেই স্বপ্নের তাজমহলের দিকে. আপনারা হয়তো সবাই শুনেছেন যে তাজমহলের রং বদলায়. ও কথাটা ঠিক ও বটে. তাজমহল সাদা রঙের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা. যার কারণে সূর্যের রং পরিবর্তনের সাথে সাথে তাজমহলের রংও পরিবর্তিত হয়. যার কারণে তাজমহল এক এক সময়ে একেক অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে মুগ্ধ করে সবাইকে. ভোর বেলায় এই তাজমহল গোলাপি এবং বেগুনি রঙের সংমিশ্রনে একটি অপরূপ ধারণ করে. তেমনি সূর্যাস্তের সময় হালকা নীল একটি বর্ণ ধারণ করে. তাজমহলের এই বৈচিত্রময় সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছর জড়ো হয় হাজারো পর্যটক এমনকি আমাদের সবারই একটি ইচ্ছা এই তাজমহলকে একবারের জন্য হলেও নিজের চোখে দেখে আসা.
এই তাজমহলকে নিয়েই আর একটি আশ্চর্য ঘটনা শুনুন, তাজমহল যখন পুরোপুরি নির্মিত হয়ে যায়, খন সম্রাট শাহজাহান নির্দেশ দেন যাতে এর নির্মাণকারী সকলের হাত কেটে দেওয়া হয়. চমকে যাওয়ার মতো এই নির্দেশের পেছনের কারণ ছিল যে এই সুন্দর তাজমহল যেন কখনো আর কেউ না বানাতে পারে. আর তাই এই তাজমহল নির্মাণ করা স্থা শিল্পীদের হাত যেন আর কোথাও না পাওয়া যায়. যাতে তারা অন্য কোথাও আর কোনভাবেই এই তাজমহলের মতো কোন স্থাপত্য নির্মাণ করতে না পারে. আর এই নির্দেশ শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা, তাজমহলের ছাদে একটি গভীর গর্ত তৈরি এই গর্তটি অনেক পর্যটকেরই নজর এড়িয়ে যায়. লুকানো এই গর্তের কারণে বৃষ্টি হলে, তাজমহলের ভেতরে এই গর্ত দিয়ে ভেতরে পানি চলে আসে. এই তাজমহলেরই অবিকল একটি রূপ রয়েছে বাংলাদেশের সোনার গাঁও এ. এই বাংলাদেশের তাজমহল তৈরি করেছিলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসান উল্লাহ মনি. এটি নির্মাণ করতে তার সময় লেগেছিল মাত্র পাঁচ বছর এবং খরচ হয়েছিল আটান্ন মিলিয়ন ইউএসড ডলার.
বন্ধুরা কখনো সুযোগ হলে এই আগ্রার তাজমহল অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন. সম্রাট শাহজাহানের এই স্মৃতি সৌধটিকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়. প্রতিদিন পনেরো হাজার পর্যটক আসেন এই তাজমহল প্রদর্শন করতে.
তো আজকের মত এটুকুই. আবারও আসব আপনাদের কাছে নতুন এবং অজানা কোন তথ্য নিয়ে. সে পর্যন্ত ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন.এবং আমার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments